দেশের তথ্য ডেস্ক।। বাগেরহাট থেকে ফেনীতে এসে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন মমিনুল ইসলাম। গত সাত বছর ধরে এ কাজ করেই চলছে পরিবার। মাস শেষে পরিবারের জন্য টাকা আয় করলেও অন্যান্যদের মতো পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের সুযোগ হয় না তার। এ নিয়ে শুরুতে আক্ষেপ থাকলেও এখন নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন তিনি।
সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে ফেনী শহরের বিভিন্ন এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে একই সুরে কথা বলেন তারাও।
শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজ করছেন মাহবুবুল হক। পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপনের কথা জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করলেও অন্যান্যদের মতো পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনের সুযোগ হয় না। ইচ্ছে থাকলেও পেটের দায়ে বাড়ি যেতে পারি না। ঈদের দিনেও ডিউটি করতে হবে। পরিবারের ঈদ উদযাপনের জন্য বাড়িতে বেতনের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে ৬ বছর এভাবেই যাচ্ছে। শুরুতে খারাপ লাগলেও এখন মানিয়ে নিয়েছি।
সাহাব উদ্দিন নামে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মোড় শাখার বুথে দায়িত্বরত আরেকজন বলেন, কয়েক বছর ঢাকাতে ছিলাম। তারপর গত ৫ বছর ধরে ফেনীতে আছি। করোনাকালীন সময়েও রোজা রেখে অনেকদূর হেঁটে এসে বুথে কাজ করেছি। কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পাইনি। কখনো পাই না। ঈদের দিনেও ডিউটি করতে হবে। গত কয়েক বছরে বেশিরভাগ ঈদই এভাবে কাটছে। বাড়িতে দুই ছেলে ও স্ত্রী আছে। চাইলেও তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ করতে পারি না।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বুথে দায়িত্বরত বেলায়েত হোসেন বলেন, এ বুথে আমরা তিনজন কাজ করি। যেকোনো একজন ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ ছিল। সেখান থেকে একজন চলে যাওয়ায় আমার যাওয়া হয়নি। ঈদের পরে যাব। তবে বাড়িতে বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। যেতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু এমন পেশায় আছি আপসোস করেও আর কি করব। এখানেই আমাদের ঈদ আনন্দ।
তাদের মতো অনেকটা একই গল্প ফেনী শহরের প্রায় ৫০টিরও বেশি এটিএম বুথে দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তাকর্মীদের। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই আপন ঠিকানায় ছুটে গেলেও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে অংশ নিতে পারছেন না এসব এটিএম বুথের অধিকাংশ নিরাপত্তাকর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একটি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ব্যাংকের বুথে কাজ করলেও তাদের কোম্পানির মাধ্যমে অফিস নিয়োগ দিয়ে থাকে। আমাদের সঙ্গে তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই। সেজন্য ছুটির বিষয়েও আমরা কিছু করার সুযোগ নেই। মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কিছু সহযোগিতা করি। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।