মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থাপনা বিক্রয়ের দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার (২৫ মার্চ) ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রভাবে অনেকেই দরপত্র জমা দিতে পারেননি। এমন কি একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে জোর করে ক্রয়কৃত দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
সদর উপজেলার আওতাধীন ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন, অকেজো, জরাজীর্ণ ভবন, টিনের ঘর এবং গাছ নিলামে বিক্রি দরপত্র আহ্বান করে সদর উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রভাবের কারণে অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের ক্রয়কৃত দরপত্র জমা দিতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সদর উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ৪ মার্চ সিদ্ধান্ত নেয় নিলাম কমিটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৪ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ বিকেল তিনটা পর্যন্ত দরপত্র আহ্বান করে সদর উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়। এবং ২৫ মার্চ বিকেল তিনটা পর্যন্ত বিক্রি হওয়া দরপত্র গুলো জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। এই নিলামের দরপত্রের জন্য স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৪৪টি দরপত্র বিক্রি হলেও আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের দাপটের কারণে জমা পড়ে মাত্র ৬২টি দরপত্র।
ভুক্তভোগী ঠিকাদার জাহিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, সদর উপজেলার পূর্ব দাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই তিনটি দরপত্র ক্রয় করি। কিন্তু গত ২৪ মার্চ (রোববার) সন্ধ্যার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক রুবেল, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবদুর রাজ্জাক রাজার ছোট ভাই আল-রাফি আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসরাফিল হোসেনের অফিসে। সেখানে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা আমার কাছে থাকা তিনটি দরপত্র জোর করে ছিনিয়ে নেয়। শুধু তাই নয় আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, এই বিষয়টি নিয়ে অন্য কারও সঙ্গে যেন আলোচনা না করি। তাদের কারণে আমাদের মতো ঠিকাদাররা কোনো কাজই করতে পারে না। আমার মতো আরো অনেকের দরপত্র তারা নিয়ে গেছে, যাতে দরপত্র জমা দিতে না পারে।
সাজু আরও বলেন, এই দরপত্রটি অফলাইনে আহ্বান করার কারণে আমি দরপত্র ক্রয় করিনি। তবে অনলাইনে হলে অবশ্যই দরপত্র ক্রয় করতাম। এছাড়া যে কয়টি কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, সেগুলো হিসাব করে দিখেছি, কাজটি পেলে তেমন লাভ হবে না।
এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা আল রাফি মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগকারীকে আমি চিনি না, এবং তিনিও আমাকে চেনেন না। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক রুবেল মুঠোফোনে বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসে দরপত্র জমা দেওয়ার সময় কারও দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়া বা দরপত্র জমাদানে বাধা দেওয়া হয়নি। জাহিদুল নামে এক ঠিকাদার যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা, কারণ তিনি সন্ধ্যায় যার সঙ্গে সমঝোতা করেছেন তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যার বিষয়ে আমি জানি না। একজন আমার কাছে মৌখিক ভাবে বলেছিলেন, যে তিনি অন্য আরেক জন ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন। কিন্তু দরপত্র জমা দিতে কেউ বাধা দিয়েছে এমন অভিযোগ কোনো ঠিকাদার লিখিতভাব আমার কাছে দেয়নি। কতগুলো দরপত্র বিক্রি হয়েছে, আর জমা পড়েছে কতগুলা দরপত্র, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি ইউএনও স্যারের কাছ থেকে নিলে ভালো হয়।
এ বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিটন ঢালীর সরকারি মোবাইল নম্বরের একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিভিস করেননি।
দেশের তথ্য ডেস্ক