খুলনায় ওয়েস্টার্ন ইন হোটেল থেকে উদ্ধারকৃত মৃত নারীর পরিচয় তিন দিনেও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ওই নারীর মৃত্যু নিয়ে ইতোমধ্যে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার বিকেলে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে খুলনা পিবিআই এবং সিআইডির বিশেষ টিম মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় তার দেহ থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যা পরীক্ষার জন্য আদালতের আদেশের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ। তবে যে হোটেলটিতে লাশ পাওয়া গেছে তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে।
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া মৃত নারীর পরিচয় মেলাতে পারেনি পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার তার মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওই নারীর লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আরিফুর রহমান বলেন, শুক্রবার মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর সেখানে খুলনা পিবিআই এবং সিআইডির বিশেষ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা ওই নারীর ফিঙ্গার ম্যাচ করার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ডিএনএ এবং ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে তারা পুলিশের কাছে দিয়েছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে সেগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হবে। তাছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ওই রিপোর্ট হাতে আসলে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে যে, এটি হত্যাকান্ড না আত্মহত্যা।
এদিকে ওই হোটেলটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বির্তকের সৃষ্টি হচ্ছে খুলনা নগরীতে। বিগত সরকার আমলে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের শাখা অফিস ছিল ওয়েস্টার্ন ইন হোটেল। সেখানে বসে তিনি নগরীতে ট্রেন্ডারবাজিসহ যাবতীয় অপকর্ম পরিচালনা করতেন। গতবছর ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পতিত সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে গেলে প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা হোটেলটি দখলে নেন। যেখানে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আনাগোনা দেখা যায়। ফলে অজ্ঞাত নারীর মৃত্যু নিয়ে ওই হোটেল কেন্দ্রীক আলোচনা চলছে নগরজুড়ে।
একাধিক সূত্র জানায়, এর আগেও ওই হোটেলে একাধিকবার এসেছে ওই নারী। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন হোটেলে ছিল তার অবাধ যাতায়াত। হঠাৎ করেই এই রহস্যময় নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর কুলকিনারা করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন।
রহস্যজনক মৃত্যুর পর ৬ টি মোবাইল সিমকার্ড ও একাধিক ভুয়া ন্যাশনাল আইডি কার্ড উদ্ধার নিয়েও পুলিশ চিন্তিত। এই মৃত্যুর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে কিনা তা নিয়েও গুঞ্জন চলছে নগরজুড়ে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়েস্টার্ন ইন হোটেলে তৃতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ জন্ম সনদ দিয়ে ভাড়া নেয় আসমা নামের এক নারী। শুক্রবার সকালে হোটেলে নাস্তা করেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে হোটেলে কর্মচারী ডাকলে ভেতর থেকে কোন সাড়া দেয়নি ওই নারী। পরে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ দরজার লক ভেঙ্গে ওই নারীর ঝুলন্ত মরদেহ রুম থেকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে ৬ টি সিম কার্ডও উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে একটি অকার্যকর এবং আরেকটি বিদেশী নম্বর ছিল।