পিচঢালা এ মহাসড়কের পথ যেতে যেতে সারি সারি গাছে সোনালু ফুলের দৃষ্টিনন্দন রূপ মোহিত করছে লোকজনকে। অনেকেই গাড়ি থামিয়ে সোনালু ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন, কেউ আবার ভিডিও বানাচ্ছে। মহাসড়ককে রঙিন করে তোলা ঝুমকার মতো ঝুলে থাকা এ ফুলের মোহনীয় রূপে বিমোহিত হচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রামে চলাচলকারী নানা বয়সী মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লার কোটবাড়ী নন্দনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভাজকে সোনালি রঙের আভা ছড়িয়ে ফুটে আছে থোকায় থোকায় সোনালু ফুল। এ ফুলের চোখজুড়ানো সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে ফুলপ্রেমীদের। সবুজ পাতা ছাপিয়ে দৃশ্যমান হওয়া কানের দুলের মতো সোনালি ফুলগুলো দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে বাসের যাত্রীদের। সোনালু ফুলের অলংকার পরে গ্রীষ্মের প্রকৃতি নতুন রূপে যেন সেজে উঠেছে। গ্রীষ্মের রোদে এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন বেড়ে যায় বহুগুণ। এ ফুল গ্রামীণ প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
জানা গেছে, সোনালু এ দেশে একটি পরিচিত গাছ। এ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা। এর ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি। এটি ভারতীয় উপমহাদেশে ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্থানীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট এ গাছের হলুদ ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। মাঝারি আকৃতির এ গাছের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকে। বসন্তে এ গাছ পত্রশূন্য থাকে। বৈশাখে নতুন পাতা গজায় ও এ গাছে ফুল আসে। হলুদ বরণ সোনালু ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি এর আছে বাহারি অনেক নাম। এসব নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি। সোনালুর ফুল, ফল ও পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এর কাঠের রং ইটের মতো লাল। এই গাছ ঢেঁকি, সাঁকো বানানোর কাজে বেশি ব্যবহার করা হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বলেন, ব্যস্ততম ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে হলুদ রঙের বাহারি সোনালু। গাছ হলুদ ফুলে বর্ণিল থাকায় চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন। যে কারণে চলাচলকারীরা এখন সোনালু ফুলের সুবাস নিতে নিতে গন্তব্যে যেতে পারছেন। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো এ সোনালু ফুল প্রকৃতি আমাদের উপহারস্বরূপ দিয়েছে। তবে প্রকৃতিকে সাজাতে আমাদেরও সবার এগিয়ে আসা উচিত।
কুমিল্লা সিটি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবদুল হান্নান বলেন, মধ্যম আকৃতির সোনালু এ দেশের স্থায়ী বৃক্ষ। সোনালুর ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। এটির পুংকেশর ১০টি এবং দীর্ঘ মঞ্জুরি দণ্ড আছে। বসন্তে এটি পত্রশূন্য থাকে। গ্রীষ্মকালের বৈশাখে নতুন পাতা গজায়। প্রকৃতিতে শোভাবর্ধনে সোনালুর জুড়ি নেই। সোনালু ওষুধি বৃক্ষের তালিকাভুক্ত গাছ। সোনালুগাছের পাতায় ও বাকলে ওষুধি গুণাগুণ আছে। বিশেষ করে, এর ফল বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে কাজ করে। এটি ডায়রিয়াও বহুমূত্র রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রাতের বেলায় বিপরীত দিকের গাড়ির হেডলাইটের আলো যেন চালকের চোখে না পড়ে এ জন্য বিভাজকের বিভিন্ন ধরনের গাছের পাশাপাশি ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, হৈমন্তী, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুলসহ প্রায় ৫৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক স্লোপে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, চালতা, নিম, একাশিয়া, হরিতকীসহ ওষুধি ও ফলজ বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ পরিচর্যায় জন্য শ্রমিক রয়েছে। তারা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। বর্তমানে সোনালু ফুল ফুটে মহাসড়কের পরিবেশ আরও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।