খুলনার কয়রায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ৭৬ জনের নামে ১২ বছর পূর্বের হত্যা চেষ্টার মামলা হয়েছে।
৫ফেব্রুয়ারী বুধবার কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১২ বছর পূর্বের ঘটনায় মামলাটি করেন ফারুক শেখ (৫৭)। তিনি উপজেলার ৫ নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় একজন জেলে। মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক মোঃ আজহারুল ইসলাম।
আসামীরা হলেন, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম, , উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সরদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার পাড়, সাধারণ সম্পাদক নিশীত রঞ্জন মিস্ত্রী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কমলেশ কুমার সানা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী গাইন, কবি শামসুর রহমান, আইনজীবী কেরামত আলী, এসএম আঃ রাজ্জাক সানা, মোশারফ হোসেন, আরাফাত হোসেন, কয়রা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এসএম হারুণ অর রশিদ, কোষাধ্যক্ষ শাহজাহান সিরাজ, কালের কন্ঠে’র কয়রা প্রতিনিধি ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি তারেক হাসান লিটু, ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম টিংকুসহ ৭৬ জন নামীয় ব্যক্তিসহ ৬০ থেকে ৭০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। আসামীদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ তাদের অনুসারি আইনজীবি, শিক্ষক ও সাংবাদিক রয়েছে। যার মামলার নম্বর- ৬৭/২৫।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী বিকেলে কয়রার দেউলিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গেটে পৌঁছালে বাদী জামায়াতের ব্যানারে একটি মিছিল আসতে দেখতে পান। কয়রা মহিলা কলেজের দিক থেকে আসা শান্তিপূর্ণ মিছিলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এসএস বাহারুল ইসলাম ও এসে এমন শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যু্বলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দসহ তাদের অনুসারি আনুমানিক দেড়শ’ জন মানুষ আগ্নেয়াস্ত্রসহ লাঠি সোঠা নিয়ে মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের অতর্কিত হামলায় ও মুহুর্মুহু গুলি থেকে জীবন বাঁচানোর তাগিদে মিছিলরত জনতা এদিক ওদিক ছুটে পালাতে থাকে। ওই সময় তিনিও প্রান ভয়ে একটি দোকানের আড়ালে আশ্রয় নেন। তবে আসামিরা বাদীকে দেখে জামাত-শিবিরের কর্মী মনে করে ধরধর বলে উঠে এবং বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়ে। একটি বুলেট বাদীর কোমরের নিচে লেগে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে পেটের নাভির পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। সাথে সাথে পেটের নাড়ি বের হয়ে যায় এবং বাদী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে গুলির আওয়াজ কম হলে আনুমানিক বিকাল ৫ টার দিকে স্থানীয় জনতা ঘটনাস্থলে যেয়ে বাদীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। তবে মৃত প্রায় বাদীকে জায়গীরমহল হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধাগ্রস্থ করে আসামীরা। পরে গোপন জায়গায় চিকিৎসা নেন। একপর্যায়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন।
মামলার বাদী ফারুক শেখ বলেন, তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রতিকূল থাকায় মামলা করতে পারিনি। বর্তমানে অনুকূল পরিবেশে ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি।
বাদীর আইনজীবি এডঃ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে। আগামী ২০ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি। আশা করি ন্যায় বিচার পাবো।