দেশের তথ্য ডেস্কঃ
ডুমুরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা রহমান ও সিনিয়র শিক্ষক রতন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ভুয়া টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের মূল্যবান সম্পদ আত্মসাৎ, নকল ভাউচারে সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ ছাত্রীদের জোরপূর্বক কোচিং করতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ডুমুরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে হওয়া দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ এবং অভিযোগের বিষয়ে সঠিক তদন্তের দাবী জানান সাধারন শিক্ষকরা। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত দিনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা রহমান এবং শিক্ষক রতন বিশ্বাস কোনোরুপ টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যালয়ের দুটি সরকারি পাকা ভবন বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন। বিদ্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ন আসবাবপত্র,জিনিসপত্রও বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক রতন বিশ্বাস ব্যপক জনরোষে পড়েন।
এক পর্যায়ে সাবেক ভূমি মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের শেল্টারে ভূয়া টেন্ডারের জন্য কাগজপত্র তৈরির কাজ শুরু করেন। ছাত্র জনতার বিপ্লবের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা কাগজপত্র তৈরি করেন। এরপর জেলা প্রশাসক বরাবর টেন্ডারের আবেদন করেন। টেন্ডারের আবেদনে ভবন দুইটি ভেঙ্গে তার মালামাল বিদ্যালয়ে সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবে কোন গুরুত্বপূর্ন মালামাল বিদ্যালয়ে নেই। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক একটি প্রতিবেদন প্রধান শিক্ষক ডিসি অফিসে আবেদনের সাথে জমা দিয়েছেন। যেখানে ভবন দুইটি ভেঙ্গে তার মালামাল বিদ্যালয়ে সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো কিছুই স্কুলে অবশিষ্ট নেই বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়। তথ্য সূত্রে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী বাবু গৌতম মজুমদারের ২০/০১/২০১৫ তারিখে স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় তিনি ভবনটি ব্যবহার উপযুক্ত আছে বলে মন্তব্য করেছেন। এই ভবন মেরামত ও ফ্লোর উঁচু করনের জন্য ৪০ লক্ষ টাকা এবং বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য আরও ১০ লক্ষ টাকাসহ মোট ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করেছিলেন।
কিন্তু সেই একই ব্যক্তি ২৮/০৭/২০২৪ তারিখে প্রতিবেদন দিয়েছেন যে ভবন দুইটির ফ্লোর মাটির নিচে চলে যাওয়ায় তা ব্যবহার অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। বিদ্যলয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের ভবনটি ২০২০ সালে সংস্কার করা হয়েছিলো। করোনার ছুটির আগেও সেখানে ছাত্রীদের ক্লাস করানো হত। বিদ্যালয় ঝুকিপূর্ন হলে ২০১৫ সালে মেরামত না করে নতুন ভবন নির্মান করলে সরকারি অর্থের অপচয় হতো না। সঠিক প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই না করেই দিয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবন মেরামত না করেই ভুয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
তারা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষক রতন বিশ্বাস ডুমুরিয়া উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা। সাবেক ভূমি মন্ত্রী বাবু নারায়ন চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্টজন। রতন বিশ্বাস এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তিনিই মূলত বিদ্যালয়ের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং বাস্তবায়ন করতেন। প্রধান শিক্ষক সালমা রহমান নামে মাত্র রয়েছেন। রতন বিশ্বাস বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার হলে উত্তরপত্র দেয়া, জোর করে নিজ স্কুলের ছাত্রীদের আর বাসায় গিয়ে কোচিং করতে বাধ্য পর্যন্ত করেছেন। ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রীদের অভিভাবকরা জানান, ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তির জন্য আবেদন ফি টেলিটকের মাধ্যমে অনলাইনে দিতে হয়। কিন্তু তার পরও স্কুল থেকে ১০০/- দিয়ে ভর্তি ফরম ক্রয় করতে হয়। যা সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফিসের অতিরিক্ত। এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করা হলেও রতন বাবু সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্টজন হওয়ার কারনে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, পূর্বে প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষক রতন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত হলে, তদন্ত কমিটি তদন্তের সময় অভিযুক্তদের সামনে প্রশ্ন করেছেন বলে বিদ্যালয়ে হওয়া বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি সম্পর্কে সাধারন শিক্ষকরা বিস্তারিত কোন কথা বলতে পারেননি। শিক্ষকরা কাঠের পুতুলের মত রয়েছেন।
নিয়মানুযায়ী ভর্তির আবেদন ফিসের ৫০% অর্থ শিক্ষক-কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বাবদ দেয়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক এই পাঁচ বছর কাউকেই কোনো টাকা দেননি। তিনি আরো বলেন, এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে এবং গোপনীয়তা রক্ষার নিরাপত্তা দিলে তারা এবিষয়ে আরো তথ্য দিবেন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী বাবু গৌতম মজুমদার বলেন, আগে ক্যাম্পাসটি নিঁচু ছিলো। এখন উঁচু হয়েছে। এখন দুই তলা ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তবে ইট বেশী পাওয়া যাবে না।
জানালা,দরজা এগুলো আছে। ২০১৫ সালে দেয়া প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তখন কি প্রতিবেদন দিয়েছিলাম তা মনে নেই এখন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারায়ন চন্দ্র চন্দ মন্ত্রীর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। বিদ্যালয়ের ভবনে মালামাল আছে। সেভাবেই টেন্ডারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমি কোন অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত না। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে তিনি দাবী করেন।