কয়রা প্রতিনিধিঃ অরবিন্দ কুমার মন্ডল
খুলনার কয়রায় দুর্গোৎসবের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে উপজেলার ৪৮ টি মন্ডপের সবখানেই দুর্গাপূজা হচ্ছে । শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কয়রা উপজেলাব্যাপী সকল মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রতিমার অনুপম রূপ দেয়ার শেষ মুহূর্তের কাজে। রং তুলির বর্ণিল পরশে দেবী দুর্গাকে মোহনীয় সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
শরতের স্নিগ্ধ আবহে আজ থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বোধনের ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। মন্দির ও মন্ডপ গুলোতে সন্ধ্যায় বসানো হবে বোধনের ঘট। পূজার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী আজ বোধন ও আগামীকাল বুধবার ষষ্ঠী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে দুর্গোৎসব চলবে।
উপজেলার মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে প্রায় অভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বুধবারের মধ্যে সকল মণ্ডপে প্যান্ডেলের কাজ চূড়ান্ত শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্যান্ডেল নির্মাণকারীরা। ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে কয়রা সদর শ্রীশ্রী সনাতন ধর্ম মন্দিরে যেয়ে দেখা যায় সেখানে প্রতিমা নির্মাণ সহ রং তুলির কাজ শেষ হয়েছে। মন্দির কমিটির সভাপতি জগদীশ মজুমদার জানান, নজরকাড়া প্রতিমা তৈরীতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে তারা দুর্গা পুজো প্রতিবারের ন্যায় এবারও উদযাপন করতে যাচ্ছেন।
জোড়শিং সার্বজনীন শ্রীশ্রী দূর্গা মন্দিরের সভাপতি দীপক কুমার মন্ডল জানান, উৎসব মুখর পরিবেশে এখানে দুর্গাপূজাসহ সকল পূজা সম্পন্ন করে থাকেন। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটছে না।
বড়বাড়ী সার্বজনীন মন্দির কমপ্লেক্সের সভাপতি শিক্ষক অচিন্ত্য কুমার রায় বলেন, শরতের শিশির ভেজা কাশফুলই শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা দেয়। এই দুর্গোৎসব ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বধর্ম ও শ্রেণীর মানুষের মধ্যে। জাতির মঙ্গল কামনায় সব অশুভ শক্তি বিনাশে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ইতিমধ্যে মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার শশুরালয় থেকে পিতৃগৃহে আগমন ঘটেছে। আসরিক শক্তির বিনাশ আর পার্থিব শান্তি ও কল্যাণ কামনায় সমৃদ্ধি লাভের জন্য হিন্দু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে মা দুর্গার আরাধনা করে আসছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি এ্যাডঃ অম্বিকাচরণ সানা বলেন, উপজেলায় এবার ৪৮ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। এর মধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়নে ৬টি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে ৩টি, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে ৩টি, মহারাজপুর ইউনিয়নে ৩টি, বাঙ্গালী ইউনিয়নে ৮টি, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে ১২টি ও আমাদী ইউনিয়নে ১৩টি। তিনি আরো বলেন, এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করতে পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সাথে দফায় দফায় মতবিনিময় করা হয়েছে।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহ্ আলম বলেন, কয়রায় মোট ৪৮ টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। কোন পূজা মন্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছেনা। তবে শান্তিপূর্ণভাবে দূর্গাপূজা উদযাপনের জন্য প্রত্যেকটি মন্দিরে
৬ থেকে ৮ জন আনসার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের ৭টি টহল টিমসহ সার্বক্ষণিক স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।