কয়রা প্রতিনিধিঃ অরবিন্দ কুমার মণ্ডল
এমন ঘটনা ঘটেছে খুলনার কয়রায়। শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় বিনা অপরাধে ১০ দিন জেল খেটেছেন মহসিন গাজী নামে এক দিনমজুর। এজন্য তাকে ঐ বেসরকারি সংস্থার ঋণের টাকাও আদালতের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়েছে। সংস্থার দায়ের করা মামলায় গত ১৩ই এপ্রিল তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। দিনমজুর মহসিন গাজীর খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ী গ্রামে বাড়ী। তিনি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত শুক্রবার কয়রা থানায় অভিযোগ করেছেন।
কয়রা থানা পুলিশের পরিদর্শক ( তদন্ত) শাহ আলম জানিয়েছেন, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থার দায়ের করা মামলায় ৪ মাসের সাজা হয় মহসিন রেজা নামের এক ব্যক্তির। মহসিন রেজা ও মহসিন গাজীর বাড়ি একই গ্রামে। তাদের দু’জনের বাবার নামেও মিল রয়েছে। নাম, ঠিকানা ও বাবার নামে মিলে যাওয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য ওই সংস্থাটিকে তার জমা দেওয়া টাকা ফেরত ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন মঠবাড়ী গ্রামের মহাসিন রেজা নামের এক ব্যক্তি। এর মধ্যে বিভিন্ন কিস্তিতে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। বাকি টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ঋণ খেলাপি হওয়ায় উক্ত সংস্থা থেকে লিগাল নোটিশ পাঠানো হয়। পরে এক মাসের সময় নিয়ে তার নিজ ব্যাংক হিসেবের একটি চেক সংস্থায় জমা রাখেন মহসিন রেজা।
এরপরও টাকা পরিশোধ না করায় সংস্থার ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে ২০২১ সালে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিবাদীর অনুপস্থিতিতে ৪ মাসের সাজা হয়। পরে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে পুলিশ মহসিন রেজার পরিবর্তে দিনমজুর মহাসিন গাজীকে জেল হতে প্রেরণ করেন।
ভুক্তভোগী মহসিন গাজী বলেন, পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে মামলার কথা বলে আটক করে তাকে। এ সময় তিনি মামলা সম্পর্কে জানতে পেরে পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে ওই ব্যক্তি তিনি নন। কিন্তু পুলিশ তার কোন কথা না শুনে তাকে ধরে নিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। পরে নিরুপায় হয়ে সংস্থার টাকা জমা দিয়ে জামিন নেন মহসিন গাজী।
এবিষয়ে মহসিন গাজীর ছেলে মহিবুল্লাহ গাজী বলেন, তার বাবাকে পুলিশ জেল হাজতে পাঠানোর পর ওই সংস্থার অফিসে বারবার গিয়েছেন তিনি সংস্থার কর্মকর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ঐ একই গ্রামের মহসিন রেজার পরিবর্তে আমার বাবা মহসিন গাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং আমার বাবা এই সংস্থা থেকে কোনদিন ঋণ নেননি। তারপরও তারা ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে বলেন। তাদের ঋণের পাস বইতে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ঋণ গ্রহীতার ছবি থাকলেও তারা এড়িয়ে যান। বিনা অপরাধে আমার বাবা জেল খেটেছেন এবং আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে এই ঋণের টাকা জমা দিয়ে বাবাকে কারা মুক্ত করেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
মামলার বাদী ও সংস্থার জেষ্ঠ কর্মকর্তা (অর্থ ও হিসাব) কামরুজ্জামান বলেন, মামলার পর তিনি খুলনা থেকে অন্যত্র বদলি হয়েছেন। এ বিষয়ে পরে আর কোন কিছু বলতে পারেন না।
কয়রা উপজেলা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন এর বর্তমান ব্যবস্থাপক তরিকুল ইসলাম বলেন, ভুলক্রমে মহসিন রেজার পরিবর্তে মহসিন গাজীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা জানতাম না। টাকা আদালতে জমা দেওয়ার পরে এবং জামিন নেওয়ার পরে আমরা জানতে পেরেছি। এখন যেহেতু তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন সেহেতু বসাবসি হলে আমরা তার টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
এ বিষয়ে ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু সাঈদ বলেন, আমিও বিষয়টি পরে শুনেছি। তবে বিষয়টি অমানবিক। পুলিশ এবং সংস্থা উভয়েই এঘটনার জন্য সমানভাবে দায়ী। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি ও ঐ দিনমজুরের জমাকৃত টাকা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
কয়রা, খুলনা প্রতিনিধি