হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফডার উৎপাদন বিষয়ক কর্মশালায় প্রফেসর রেজাউল করিম

20240919_202116-scaled.jpg

দেশের তথ্য ডেস্কঃ
প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণে খুবির এই গবেষণা অত্যন্ত কার্যকরি হবে
মাটি ছাড়া চাষাবাদের মাধ্যমে গৃহপালিত পশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণে ঘাস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষক দল। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাসকে ‘হাইড্রোপনিক ফডার’ বলা হয়, যেটি সাধারণ ঘাসের থেকে অনেক বেশি পুষ্টিকর। এ বিষয়ে আজ ১৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২.৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, সম্প্রতি বন্যায় দেশে প্রচুর গবাদি পশু খাদ্য সংকটে পড়েছিল, অনেক পশু খাদ্যের অভাবে মারাও গেছে। এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা (হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাস) গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে পশুদের খাবার উৎপাদন খুবই কম দেখা যায়। কিন্তু বিদেশে বেশিরভাগ খামারিরাই গো-খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করে। ফলে তারা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য গবাদি পশুকে খাওয়াতে পারে। এতে তাদের পশুটির স্বাস্থ্য ভাল থাকে এবং অধিক পরিমাণে দুধও পাওয়া যায়। আমাদের দেশে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফডার উৎপাদনও পশুদের জন্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার হতে পারে। বিশেষ করে যাদের জমি নেই কিংবা শহর অঞ্চলের খামারি তারা এতে বেশি আগ্রহী হতে পারেন।
প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ এখন অনেক জনপ্রিয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে চীন বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই খুলনার উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে এটা কতটা কার্যকরি তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। এতে এই অঞ্চলের কৃষকরা উপকৃত হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি যুগোপযোগী এই গবেষণার জন্য সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. শামীম আহমেদ কামাল উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গবেষণা ও উদ্ভাবনী কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী দিদারুল ইসলাম, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রধান গবেষক, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম। গবেষণা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন সহকারী গবেষক ও এমএস শিক্ষার্থী মোঃ মোসতাযাবুর রহমান। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী কেন্দ্রের অর্থায়নে এবং এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন কর্তৃক গৃহীত `Determination of Comparative Biomass Yield, Nutritional Quality and Production Cost of Five Different Hydroponic Fodder’ শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়নের নানা দিক তুলে ধরেন। এ কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রান্তিক কৃষকরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান গবেষক ও সহকারী গবেষক গবেষক জানান, সাধারণ ঘাসের তুলনায় হাইড্রোপনিক ফডারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যার মধ্যে অধিকতর ভিটামিন, খনিজ উপাদান, প্রাণীদের কাছে সুস্বাদু ও খুব সহজেই হজম হয়ে শরীরের পরিপাকতন্ত্র দ্বারা পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়ে যাওয়া অন্যতম। সাধারণ ঘাসের তুলনায় এর মধ্যে থাকা বীজের জন্য আমিষের মাত্রা বেশী হয়। এটি ৭ থেকে ১১ দিনে উৎপাদন করে ব্যবহার করা হয় বিধায় এতে আঁশ ও লিগনিন জাতীয় পদার্থের মাত্রা কম থাকে ফলশ্রুতিতে এনার্জির পরিমাণেও সাধারণ ঘাসের তুলনায় সাধারণত বেশী হয়। অঙ্কুরোদ্গম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন এনজাইমের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় যা বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন-বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ইত্যাদি ভিটামিন সংশ্লেষণে সহায়তা করে এবং এটি গ্রহণে প্রাণীদেহে ভিটামিনের শোষণ এবং জৈব উপলভ্যতা বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা আরও জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণাটিতে মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়ায় পাঁচ প্রজাতির বীজ ব্যবহার করে এগুলোর ফলন, পুষ্টিগত উপাদান ও উৎপাদনের খরচ সম্পর্কে বিশদভাবে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে দেখানো হয় ভুট্টা, গম, যব, সরগাম ঘাস ও বরবটির বীজ ব্যবহার করে কিভাবে খামারিরা প্রাণিসম্পদ বিকাশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারবেন। এই গবেষণায় দেখানো হয় পাঁচটি ক্ষেত্রেই প্রতিকূল পরিবেশে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফডার তৈরি করা সম্ভব। খরচের দিক বিবেচনায় গমের হাইড্রোপনিক ফডারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে ফলনের দিক থেকে যব ও বরবটি অধিক সাফল্য দেখাতে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয়। গবেষণাটি বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Share this post

PinIt
scroll to top