কয়রায় ডাঃ ফাতেমা জোহরার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত
অরবিন্দ কুমার মণ্ডল
কয়রা, খুলনা প্রতিনিধি
তারিখ ঃ ০১/০৯/২৪ ইং।
খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট(গাইনী এন্ড অবস্) ডাঃ ফাতেমা জোহরার বিরুদ্ধে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে উপস্থাপিত অভিযোগের তদন্ত সস্পন্ন হয়েছে।
১ সেপ্টেম্বর রবিবার খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
তদন্ত শেষে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, সিভিল সার্জনের নির্দেশনায় আমি তদন্তে এসেছি। অভিযুক্ত চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিসহ রোগীদের সাথে কথা বলেছি। দ্রুতই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হবে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, সরকার পতনসহ তদন্ত কমিটির সদস্যদের বদলীর কারণে তদন্ত সম্পন্নে জটিলতা দেখা যায়। তিনজনকে একত্রে কয়রায় পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে দিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি আরো বলেন, তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের নিকট পাঠানো হবে। তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।
উল্লেখ্য, খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ সফিকুল ইসলাম গত ৭ জুলাই খুলনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) ডাঃ কাজী আবু রশেদকে সভাপতি, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ বিকাশ মৃধা এবং পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদারকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তাদেরকে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। এরই মধ্যে ডাঃ ফাতেমা জোহরার অন্য হাসপাতালের সপ্তাহের তিন দিনের প্রেষণ বাতিল করে ফের কয়রায় পাঠানো হয়।
জানা যায়, গত ২ জুলাই বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়
‘একজন চিকিৎসকের এত ক্ষমতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনটিতে ডাঃ ফাতেমা জোহরা এর বিরুদ্ধে একটানা ৯ মাস কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত না হওয়াসহ অন্যান্য মাসের অধিকাংশ দিন অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি দেড় বছরে মাত্র ৫৫ দিন দায়সারা সেবা প্রদানের কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তিনি যোগদানের পর থেকে ওই উপজেলার এক হাজার ২০৯ জন নারীর ডেলিভারীর সময় সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন হলেও তিনি কাউকে অপারেশন না করায় রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার আগ্রহ কমছে বলে উল্লেখ করা হয়। দেড় বছরে ৪ হাজার ৭১ জন নারী গর্ভবতী হলেও প্রসূতি মুহুর্তে হাসপাতালে ভর্তি হন মাত্র ৩১৩ জন। আরো উল্লেখ করা হয়, লবনাক্ত উপকূলের অধিকাংশ নারীরা হাসপাতাল থেকে সেবা না পেয়ে গ্রামের অদক্ষ ধাত্রী কিংবা পল্লী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে অপচিকিৎসার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে তাদের রোগের জটিলতা বাড়ছে, এমনকি অনেকে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন।
তার বিরুদ্ধে বিগত সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দূর্নীতি দমন কমিশনের খুলনা কার্যালয়ের পত্রের প্রেক্ষিতে খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ঐ তদন্তও আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রেজাউল করিম ঐ ডাক্তারকে একাধিক কারণ দর্শানোর নোটিশসহ পূর্বের সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং উপকূলের অবহেলিত নারীদের কথা বিবেচনা না করে কয়েকবার তাকে প্রেষণে তিন দিনের জন্য অন্যত্র সংযুক্ত করা হয়।