সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় নগরীর ২৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দপ্তরে। গত ২০ দিনেও কার্যালয়টি ব্যবহার উপযোগী হয়নি। কাউন্সিলর ফকির সাইফুল ইসলামেরও হদিস নেই। সেবা নিতে আসা ২৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পাঠানো হচ্ছে সংরক্ষিত ১০নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলরের কাছে।
কেসিসির ২৯নং ওয়ার্ড সচিব বাহাদুর হোসেন বলেন, কার্যালয়ে বসার মতো চেয়ার-টেবিল নেই। কম্পিউটারও পুড়ে গেছে। এজন্য কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। আপাতত সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর নাগরিক সনদ দিচ্ছেন। আর জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করলে মোবাইল ইন্টারনেট অথবা কোনো ইন্টারনেটের দোকান গিয়ে কাজ করছি।
২৫নং ওয়ার্ডের সমস্যা কিছুটা ভিন্ন। বাইরে থেকে ভাঙচুর হলেও দপ্তরের আসবাব রক্ষা পেয়েছে। সেখানে নিয়মিত অফিস করছেন সচিবসহ অন্যরা। কিন্তু কার্যালয়ে আসছেন না কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু। নাগরিক বা অন্য যে কোনো সনদ নিতে আগে আবেদন করতে হচ্ছে, এরপর সচিব অজ্ঞাত স্থান স্বাক্ষর করে আনছেন। এতে সময় লাগছে বেশি, দুর্ভোগে পড়ছেন নাগরিকরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নগরীর বেশিরভাগ ওয়ার্ডের এখন এমন অবস্থা। ভাঙচুর করা অনেক ওয়ার্ড কার্যালয় এখনও চালু হয়নি। আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলররা এলাকায় ফিরতে শুরু করলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু কেসিসির ১৮ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা হওয়ায় আবার অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। এতে সংকট আবার বেড়েছে।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, গত কেসিসি নির্বাচনে নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডের ৩০টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা জয় পান। শুধুমাত্র ১২নং ওয়ার্ডে জামায়াত নেতা মাস্টার শফিকুল আলম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯নং ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত মাজেদা খাতুন ছাড়া অন্য ৯টিতে জয় পান মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীরা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অধিকাংশ কাউন্সিলরই আত্মগোপনে চলে যান। অনেকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় ১৯টি ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয়। এর মধ্যে ১৭ ও ২৮নং কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২৯নং ওয়ার্ডের একটি কক্ষে আগুন লাগানো হয়। আগুনে কার্যালয়ের টেবিল, চেয়ার, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, কম্পিউটার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
চেয়ার, টেবিল, দরজা-জানালাসহ সব কিছু ভেঙে তছনছ করা হয়েছে ৬, ৮, ৯, ১৩, ১৫, ১৮, ২১ ও ২৫নং ওয়ার্ড কার্যালয়ের। এসব ওয়ার্ড অফিসের কিছু মালামাল লুটও হয়েছে। এই কার্যালয়গুলোর কোনো কিছুই ব্যবহার উপযোগী নেই। এছাড়া শুধু দরজা ও জানালার কাঁচ ভাঙা হয়েছে ১, ১৯, ২৪, ২৬, ২৭ ও ৩০নং ওয়ার্ড অফিসের। ভাঙচুর থেকে বাদ যায়নি সংরক্ষিত ৩ ও ৫নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলরের কার্যালয়ও। ভাঙা জিনিস সরিয়ে কার্যালয়গুলো ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
সূত্রটি জানায়, সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেলেও গত ১০ আগস্টের পর থেকেই কাউন্সিলররা খুলনায় ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু গত শুক্রবার রাতে খালিশপুর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন ৯নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শেখ দবির ও ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মো. ইকরাম মিন্টু। মামলা দুুটিতে কেসিসির ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫, ১৮, ১৯, ২৪, ২৫, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। এর ফলে শনিবার থেকে কাউন্সিলররা আবার গা ঢাকা দিয়েছেন।
সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ, সংশোধন, নাগরিকত্ব সনদ, চারিত্রিক সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, ভূমিহীন সনদ দেওয়া হয়। প্রতিটি সনদে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর প্রয়োজন। কাউন্সিলররা আত্মগোপনে থাকায় ওয়ার্ডগুলোতে নাগরিকরা সেবা পাচ্ছেন না।
কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম বলেন, কার্যালয়গুলো ব্যবহার উপযোগী করে সেবা কার্যক্রম চালুর জন্য আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই সেবা কার্যক্রম চালু হয়েছে। কাউন্সিলরদের আত্মগোপনের বিষয়টি জানা নেই।
খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় কাউন্সিলরদের আত্মগোপন-ফিরে আসা চলতেই থাকবে। জনগণ যাতে সেবাবঞ্চিত না হয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এর বিকল্প ভাবতে হবে।