শম্পা দাস ও সমরেশ রায়, কলকাতা
আজ ২২শে আগস্ট বুধবার, ঠিক বিকেল তিনটায়, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির উদ্যোগে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে, কমরেড ও প্রাক্তন মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়, যিনি ৮ ই আগস্ট বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বহুদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে থাকার পর চির বিদায় নিয়েছিলেন। যিনি তার নিজের দেহ ও চক্ষুদান করে এক মহৎ কাজ করে গিয়েছেন,
যিনি এক সময়ে পলিট ব্যুরোর প্রাক্তন সদস্য , রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনা বসান হয় ৮০ বছর বয়সে, রেখে যান তার স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্যকে, ১৯৪৪ থেকে ১৯২৪ জীবনের প্রতিটি অধ্যায়, কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কমিউনিস্ট জীবনের একটি স্মরণীয় অধ্যায়।
আজ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দলের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী, পলিট ব্যুরোর সভাপতি থেকে শুরু করে অন্যান্য রাজ্যের সদস্যগণ,
উপস্থিত ছিলেন কমরেড বিমান বসু, কমরেড মোঃ সেলিম, কমরেড সুজন চক্রবর্তী, ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী, সৃজন চক্রবর্তী , ও বহু নেতৃবৃন্দ, সকলেই কমরেড ও প্রাক্তন মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিতে পুষ্প স্তবক দিয়ে সম্মান জানান। ও শ্রদ্ধা জানান। তাহার উদ্দেশ্যে গণসংগীত পরিবেশিত হয়।
যাহার জন্ম ১৯৪৪ সালে পিতা নেপাল ভট্টাচার্য মা লীনা ভট্টাচার্য, তাহার পরিবার ছিল রাজনৈতিক এবং সংস্কৃতিক মনোজ্ঞ, ভট্টাচার্যের শৈশব কেটেছে উত্তর কলকাতায়,
১৯৬৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হন বাংলায়, তাহার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন তখন প্রথম ছাত্র আন্দোলন এবং পরে যুব আন্দোলনে অংশ নেন, নিজের কর্মদক্ষতার জোরে ডি ওয়াই এফ এর প্রথম রাজ্য সম্পাদক হন।
১৯৬৬ সালে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিপিআইএমের সদস্যপথ গ্রহণ করেন, পাটি সদস্যের কর্মী হওয়ার আগে দুই বছর দমদম আদর্শ বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতা করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৭১ সালে, ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।।
২০০০ সালে পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য হন, ২০১৫ সালে সিপিআইএমের পার্টি কংগ্রেসের পলিট ব্যুরোর সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে ,রাজ্য কমিটিতে সান্মানিক সদস্য হয়েছিলেন।
১৯৭৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কাশিপুর থেকে জয়লাভ করে বিধায়ক হন, মাত্র ৩৩ বছর বয়সে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী হন। ১৯৮৭ সালে তিনি বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় পৌর ও নগর উন্নয়নের দপ্তরের দায়িত্ব পান।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে তিনি যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে, চতুর্থ পঞ্চম বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে রাজ্যে স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) দপ্তরের দায়িত্ব পান। ২০০০ সালের জুলাই মাসে উপ মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ঠিক ওই বছর ওই শেষের দিকে জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলে, পরবর্তী প্রজন্মের সরকারের নেতৃত্বে ২০০০ সালের ৬ই নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
২০১১ সালে বামফ্রন্টের পরাজয় হওয়ার আগে পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন।
কমরেড প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শুধু রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে থেমে থাকেননি, তিনি ছিলেন সাহিত্য সংস্কৃতির সঙ্গে অতপ্রতভাবে যুক্ত, সংস্কৃতি জগতে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অন্তরের যোগ ছিল অপরিসীম,
তিনি বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্যের এক নিষ্ঠ পাঠক ছিলেন,
তিনি নিজে অনুবাদ করেছেন মায়াকোভাস্কির কবিতা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, কাফকার রচনা, জীবনানন্দ দাশ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর তার লেখা বই বিশেষজ্ঞদের বিশেষভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এছাড়াও তিনি বহু প্রবন্ধ পুস্তিকা লিখেছিলেন। যা রাজ্যের পাটি অফিসে সংগৃহীত রয়েছে।
তিনি কাজের সুবাদে বিভিন্ন দেশ গিয়েছেন ও সফর করেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা, বিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ফ্রান্স। এমনই একটি নক্ষত্র কে হারিয়ে পার্টির অনেক ক্ষতি হলো।
এই নক্ষত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম, তিনি চিরদিন আমাদের সাথে আছেন থাকবেন, সকলে তাহাকে জানাই লাল সেলাম, অমর রহে। আজ আমরা গর্বিত সারা নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা জানাতে।
তাই আজ একটি সুন্দর ক্যাপশনের মধ্য দিয়ে, স্মরণ করে রাখতে চাই,…. চিত্ত যেথা ভয়শূন্য , উচ্চ যেথা শির…..।
,