শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের আগেই প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু হয় নিয়োগ দুর্নীতি। তৎকালীন সময়ে লোক দেখানো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও দুর্নীতি-অনিয়ম সংক্রান্ত তথ্য বহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় একাধিক বেসরকারি টেলিভিশনে। যদিও তাতে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উল্টো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিষ্ঠানের ভিসির যোগ সাজশে আগে থেকেই নির্ধারিত প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর অন্যতম কারণ হিসেবে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা ও প্রতিষ্ঠানটির ভিসি ডাঃ মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমানসহ স্থানীয় তৎকালীন আ’লীগের রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। তবে প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণাঙ্গভাবে যাত্রা শুরুর আগে থেকেই যেন কপাল খুলে যায় সেখানকার ভিসিসহ স্থানীয় আ’লীগের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ মে তৎকালীন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার ভিসি হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে, একই বছরের ২৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। আর তিনি যোগদানের পর থেকেই যেন প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু হয় নিয়োগ দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম।
এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর চিত্র। একের পর এক পদত্যাগ করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলররা (ভিসি)। দলীয় মনোভাবাপন্ন ভিসিদের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে অথবা নিজে থেকেই পদত্যাগ করছেন তারা। এমনকি ভিসি ছাড়াও একে একে পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন প্রক্টরিয়াল বডি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরাও।
সর্বশেষ এমন পরিস্থিতিতেও বহু অনিয়ম-নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোপালপুরের প্রভাবশালী এ বাসিন্দা। এমনকি যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না হওয়াসহ সর্বশেষ পরিস্থিতেও বহাল তবিয়তে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার এমন ক্ষমতার উৎস নিয়েও নানা প্রশ্ন জেঁকে বসেছে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীসহ জনমনে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করতে খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এই বিষয়টি উত্থাপন করেন খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। তিনি ১৯ আগস্ট লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালযয়ে প্রস্তাবনা দেন। প্রস্তাবনাটি অনুমোদনের পর ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ১৩ জুলাই মন্ত্রিসভায় ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, খুলনা-২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন লাভ করে। ২০২১ সালের ১ ফেব্র“য়ারি বিলটি জাতীয় সংসদে পাশ ও ৪ ফেব্র“য়ারি গেজেট প্রকাশ হয়। নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার ১নং সড়কের একটি ভাড়া করা ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যক্রম চালু হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। এ সব রোগের প্রকৃত কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসার বিষয়ে গবেষণা, সেবার মান এবং সুযোগ-সুবিধা স¤প্রসারণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বিভাগীয় শহর খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়