শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, পাঁচ ক্ষেত্রে সংস্কারের পর নির্বাচন:- প্রধান উপদেষ্টা

younus-18082024-02.jpg

বাংলাদেশে আইন, প্রশাসনসহ পাঁচ ক্ষেত্রে সংস্কারের পর অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এমন একটি সময়ে এসে দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, যখন প্রায় সবক্ষেত্রেই চরম বিশৃঙ্খলা। তাই নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করবে।’

রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার দুপুরে ঢাকায় বিদেশি বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের প্রথম ব্রিফিংয়ে ড. ইউনূস এ কথা বলেন। ৮ আগস্ট সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিন পর বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকদের সঙ্গে এই প্রথম সাক্ষাৎ করেন তিনি। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ জন মিশন প্রধান যোগ দেন।

গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের নবযাত্রায় বাংলাদেশের বন্ধু, অংশীদার ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় পাশে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, ড. ইউনূস কূটনীতিকদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনী ও মিডিয়াতে সংস্কার করার পরে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো। শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি কূটনীতিকদের পুরোপুরি সমর্থন চেয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের বন্ধুদের মধ্যে থাকতে পেরে আনন্দিত। দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বিপ্ল¬বের সাক্ষী হয়েছে। শেখ হাসিনার নৃশংস স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল লাখো বীরছাত্র-জনতা। কিন্তু তাঁর (শেখ হাসিনা) দলের ছাত্র সংগঠন ও শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দেশে ভয়াবহতম বেসামরিক গণহত্যা করার পর তিনি (শেখ হাসিনা) দেশ ছাড়েন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি সেই সমস্ত বীর ছাত্র এবং নিরীহ মানুষদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, যাঁরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের সা¤প্রতিক স্মৃতিতে অন্য কোনো দেশের ছাত্রদের তাদের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা প্রকাশের জন্য এত মূল্য দিতে হয়নি; যেখানে একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং পরিবেশবান্ধব একটি দেশের স্বপ্ন দেখতে হয়েছে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এমন একটি সময়ে এসে দেশের দায়িত্বভার নিয়েছি, যেখানে অনেক দিক থেকেই পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’ তিনি বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের নির্মম নৃশংসতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করা হয়েছিল। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম তাদের ভোটাধিকারের চর্চা না করেই বেড়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট হয়েছে। আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুণ্ঠন করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার।
ড. ইউনূস বলেন, ‘দেশ নিয়ে ছাত্রদের একটি স্বপ্ন আমাদের মুগ্ধ করেছে, যে স্বপ্ন একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।’ তিনি বলেন, ছাত্ররা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখছে যেখানে মানুষ তাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়-নির্বিশেষে, নিজেদের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। সরকার গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা বলে উলে­¬খ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক শক্তির সহায়তায় কাজ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিস্থিতি নিশ্চিত হবে। সব ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা দেশে জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনে নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, তিনি চান এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তদন্তে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সরকার সহায়তা দেবে।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ যতগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে, তার সব বাস্তবায়ন করবে সরকার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য দায়িত্ব পালন করব। এরপর আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। জাতীয় ঐকমত্য বৃদ্ধির জন্যও আমরা আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাব।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন যাত্রার এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের সাহসী ছাত্র ও জনগণের জন্য আমাদের জাতির স্থায়ী পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের যাত্রাটা কঠিন। তাদের আকাক্সক্ষা আমাদের পূরণ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সেটা হয়, ততই ভালো। আমরা বিশ্বাস করি, একটি নতুন গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের যাত্রাপথে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সব বন্ধু ও অংশীদারেরা আমাদের সরকার ও জনগণের পাশে দাঁড়াবে।’
আমেরিকা, ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ ৫০ জনের বেশি কূটনীতিত এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান।

Share this post

PinIt
scroll to top