সরকার পতনের পর পদত্যাগ করলেন যারা

1723288210-d792b8b490aef953d009f0fbd3211c80.jpg

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুর্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে পদত্যাগ করছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মিছিল। এরপর একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অনেকেই।

তার সরকারের পদত্যাগের পর এখন স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কারের পাশাপাশি শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
জানা যায়, শেখ হাসিনা গত সপ্তাহের সোমবার দুপুরে দেশ ছাড়ার পরই অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যান। আর যারা দেশ ছাড়তে পারেননি তারা চলে যান আত্মগোপনে। তবে শেখ হাসিনা পরিবারের অনেকেই ৩ আগস্ট শনিবার জানতে পেরেছিলেন সরকারের অনিবার্য পরিণতি।

তারা সেদিন ও পরের দিন রবিবার দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তবে হাসিনা পরিবারের বাইরের কেউ, এমনকি মন্ত্রিপরিষদের কেউই জানতে পারেননি যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট থেকে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের খুঁজতে থাকেন। তারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও গণহত্যার অভিযোগে এনে তাদের বরখাস্ত/পদত্যাগ এবং গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

প্রধান বিচারপতি : শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এর আগে আজ শনিবার সকাল ১১টায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট চত্বরে জড়ো হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগের এ আলটিমেটাম দেন। পরে ফুলকোর্ট সভা স্থগিত করা হয়।

এরপর পদত্যাগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি সন্ধ্যার মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন।
আপিল বিভাগের চার বিচারপতি : প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের পর আপিল বিভাগ থেকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আজ শনিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যেই তাঁরা পদত্যাগ করতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর : এর এক দিন আগে গতকাল শুক্রবার (৯ আগস্ট) পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। পদত্যাগ করেছেন। এর আগে গত বুধবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্ষোভ হয়েছে। ওই দিন একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। তাঁরা একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন এবং আরো চারজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে পদত্যাগে রাজি করান।

অ্যাটর্নি জেনারেল : গত বুধবার রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব : শেখ হাসিনার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করা মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার এক আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করা হয়েছে।

আইজিপি : গত মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চুক্তি বাতিল করে নতুন আইজিপি হিসেবে মো. ময়নুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক আইজিপি আত্মগোপনে আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য : একই দিন পদত্যাগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। তিনি ছাড়াও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সাতটি হলের প্রভোস্ট।

শাবিপ্রবি উপাচার্য : শনিবার আরো পদত্যাগ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে আমার পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আজকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’ উপাচার্য বলেন, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। বাকি যারা আছে সবাই পদত্যাগ করবেন।

বেরোবি উপাচার্য : গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হাসিবুর রশীদ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতির সচিবের কাছে উপাচার্য তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী।

রাবি উপাচার্য : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ ঊর্ধ্বতন ২৯ প্রশাসক ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) উপাচার্যসহ কর্মকর্তারা তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক : বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। যিনি ২২ দিন আগে নিয়োগ পেয়েছিলেন। শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. সরকার আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পদত্যাগপত্রটি যথাযথ মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সালাম মুর্শেদি : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। বৃহস্পতিবার রাতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানিয়েছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে বিবৃতিতে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা যায়, অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন নেওয়ার পরও অনেক কর্মকর্তা এখনো অফিসে আসছেন তারা। তারা বিদেশে অবস্থান করছেন, নাকি দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন সে বিষয়ে কারো কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। একটি সূত্র বলছে, অফিসে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মরত আছেন এমন অনেক কর্মকর্তাকেও অন্য দপ্তরে বদলি করা হতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে পদোন্নতি ও পদায়নে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় আমলাতন্ত্রের কাঠামো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সুবিধাভোগীরা সব ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এখন সরকারের পতন ঘটায় তাদের সরে যেতে হচ্ছে। রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে তাদের জায়গায় সৎ, যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top