দেশের তথ্য ডেস্কঃ
ক্যামব্রিজ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি অব ফুডের তথ্যমতে, প্রায় আট হাজার বছর আগে, দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে প্রথম আলু পাওয়া যায়। পেরুর ইন্টারন্যাশনাল পোটেটো সেন্টারের সিনিয়র কিউরেটর রেনে গোমেজের মতে, প্রথম আলু চাষ শুরু হয়েছিল লিমা থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে টিটিকাকা হ্রদের কাছে।
প্রাক-কলম্বিয়ান কৃষক, যারা আজকের পেরুর দক্ষিণাঞ্চল এবং বলিভিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আদিবাসী, তারা আন্দিজ পর্বতমালায় আলু চাষ করতেন। অল্প সময়ের মধ্যেই, আলু পেরু ও বলিভিয়ার ইনকা এবং অন্যান্য পাহাড়ি আদিবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাবার হয়ে ওঠে।
তারা আলু সেদ্ধ করে, ভর্তা করে, স্টু বানিয়ে খেতো এবং ভাঙা হাড় জোড়া লাগাতে, বাতরোগ প্রতিরোধে ও বদহজম সারাতে ব্যবহার করত।
পেরু ও বলিভিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিকরা কিছু মাটির পাত্র আবিষ্কার করেন, যেগুলোয় আলুর ছবি আঁকা ছিল। তারা এই আলুকে ‘কামাটা’ বা ‘বাটাটা’ নামে ডাকতো। পেরুর ইনকা সভ্যতায় চাষের জমিকে আলু বলা হতো, যা থেকে বাংলায় ‘আলু’ শব্দটি এসেছে।
আলু ইউরোপীয়দের নজরে আসে পঞ্চদশ শতকে, যখন ১৫৩২ সালে স্পেনের নাবিকেরা দক্ষিণ আমেরিকায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। স্প্যানিশরা পেরুতে স্বর্ণের খোঁজে গিয়েছিল কিন্তু পেয়েছিল আলুর আবাদ। ফেরার পথে তারা আলু নিয়ে যায়, যা নাবিকদের স্কার্ভি রোগ থেকে বাঁচায় কারণ আলুতে ভিটামিন সি আছে। কিছু আলু স্পেন পর্যন্ত নিয়ে আসা হয় এবং ১৫৬৫ সালের দিকে এটি প্রথমবারের মতো পেরু থেকে ইউরোপে পৌঁছায়।
ইউরোপে আসার পর কামাটা বা বাটাটা নাম বদলে হয় পটেটো।
স্প্যানিশদের হাত ধরেই আলু, টমেটো, অ্যাভোকাডো এবং ভুট্টার মতো ফসল বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকার বাইরে প্রথম আলুর প্রচলনকে ঐতিহাসিকরা ‘দ্য গ্রেট কলম্বিয়ান এক্সচেঞ্জ’ বলে অভিহিত করেন। আন্দিজ থেকে আনা প্রাথমিক শেকড়ের জাতগুলো স্পেন এবং মূল ভূখণ্ড ইউরোপে জন্মানো সহজ ছিল না, কারণ ইউরোপের আবহাওয়া ছিল ভিন্ন।
ষোড়শ শতকে স্প্যানিশদের হাত ধরেই আলুর আবাদ ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ে।
একই সময়ে চীন ও উত্তর আমেরিকায়ও আলু ছড়িয়ে পড়ে। চীনের তৎকালীন মিং সাম্রাজ্যের রাজারা আলুকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং আজ চীন বিশ্বের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত।