দেশের তথ্য ডেস্কঃ
তিন দিন ধরে রাজশাহী নগরের গৌরহাঙ্গা এলাকায় ডালি-কোদাল নিয়ে বসে থাকেন শুকুর আলী। বেলা শেষে খালি হাতে ফিরে যান। শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ি। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবারও খালি হাতেই ফিরে যান শুকুর আলী (৫৫)।
শুকুর আলী শুক্রবার সকালে ডালি ও কোদাল নিয়ে বসেন রাজশাহী নগরের গৌরহাঙ্গা এলাকায়। এই জায়গাটিতেই সাধারণত গ্রাম থেকে শ্রমিকেরা এসে অপেক্ষা করেন। সেখান থেকে গৃহকর্তারা এসে তাঁদের কাজে নিয়ে যান। অনেক সময় তাঁরা ঠিকাদারের কাজও পেয়ে যান। গৌরহাঙ্গা এলাকায় এসে শুকুর আলী ও তাঁর ছেলে বিপ্লব আলীও (৩০) কাজ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন।
সকালে শুকুর আলীর দেখা পাওয়া যায়। দুপুরের পরে কাজ না পেয়ে তাঁকে ফিরে যেতে দেখা যায়। কীভাবে আসলে তাঁদের সংসার চলছে, তা দেখার জন্য শুক্রবার বিকেলে শহর থেকে চারঘাট উপজেলার চামটা গ্রামে যাত্রা। সেখানে গিয়ে জানা গেল, মুষ্টিচালে চলছে শুকুর আলীর সংসার।
চামটা গ্রামে যেতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। একে-ওকে জিজ্ঞেস করে তাঁর বাড়ি পাওয়া গেল। বাড়ি বলতে ইটের গাঁথুনির দেড়খানা কক্ষ। ওপরে টিনের চালা। কোনো উঠান নেই। বাইরে শুধু রান্নার চুলা। মোটের ওপর এক কাঠা জমির ওপরে বাবা-ছেলের সংসার। শুকুর আলী ও তাঁর স্ত্রী বেলী বেগম নামাজে ছিলেন। তাই প্রথমে বিপ্লবের সঙ্গে কথা হলো।
বিপ্লবের সংসার পৃথক। বিয়ে করেছেন। দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তিনিও শহরে কাজে গিয়েছিলেন। গত দুই দিন তিনিও বাবার মতোই খালি হাতে ফিরেছেন। এর আগের দিন তিনি কাজে যাননি। অর্থাৎ তিন দিনে কোনো আয় হয়নি।
বিপ্লব বললেন, ‘দিন আনি দিন খাই। তিন দিন কাজ নাই। হাঁড়িতে জমানো মুষ্টিচালে সংসার চলছে। আর এক দিনের চাল আছে’। জানা গেল বিপ্লবের বাড়িতে কোনো তরকারি রান্না হয়নি।
ভাতের সঙ্গে শুধু আলুভর্তা করা হয়েছে। তাই দিয়ে খাবেন। কথা বলতে বলতেই শুকুর আলীর স্ত্রী বেলী বেগম নামাজ পড়ে বের হলেন। বেশি বললেন, বাড়িতে যা চাল আছে, তাতে আর দুই বেলার রান্না হতে পারে। কী তরকারি রান্না হয়েছে জানতে চাইলে বেলী বেগম বললেন, ‘দিনে একবার তরকারি রান্না করি, গরিব মানুষ। এত তো খরচ করতে পারিনি। আজ দুপুরে বেগুন আর পটোলের ঝোল করিচি। এই দিয়াই রাত-সকাল চালাতে হবি। সংসার চলে না। কিস্তির টাকা লিয়্যা এই ঘরটুক করিচি।’
নামাজ পড়ে এসে শুকুর আলী প্রতিবেদককে দেখে কিছুটা বিহ্বল হয়ে পড়েন। বুঝতে পারেন না যে শহর থেকে কেন তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। কীভাবে সংসার চলছে তার খোঁজ নেওয়ার জন্য যাওয়া। এ কথা শুনে শুকুর আলী আর কোনো কথাই বলতে পারলেন না। হয়তো কী বলবেন তার ভাষা খুঁজে পেলেন না।