পিয়ন জাহাঙ্গীরের ইশারায় চলতো সবকিছু

1721022675-71596088dd639b9209614bffd9a69543.jpg

দেশের তথ্য ডেস্কঃ 

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থাকাবস্থায় নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজ এলাকা নোয়াখালীর চাটখিল নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তার ইশারাতেই চলতো জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীরের নিয়ন্ত্রণে ছিল মিডিয়া হাউজও।

গতকাল রবিবার চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সরকারপ্রধানের দুনীতিরবিরোধী বক্তব্যে উঠে আসে পিয়ন জাহাঙ্গীরের নাম। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করে গেছে, পিয়ন, যে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।

তার বাবা রহমত উল্যাহ ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের একজন কেরানী। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর মেঝো। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিয়ন) হিসেবে কাজ করেছেন জাহাঙ্গীর। প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছে কাছে থাকতেন। এক পর্যায়ে তিনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রমাণসহ ধরা পড়ায় গণভবন থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
জাহাঙ্গীর আলম চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও তার দুর্নীতি ও অপতৎপরতা কমেনি। নানান জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পরিচয় দিয়েও বড় অঙ্কের টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা প্রতারিত হয়ে গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে এই অপকর্মের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবনের কর্মকর্তারাও বিব্রত অবস্থায় পড়েন। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানো জাহাঙ্গীর আলম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নোয়াখালী-১ আসন থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। বিষয়টি জানার পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, তিনি এই দপ্তরের কেউ নন। পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে নোয়াখালী ও জেলার চাটখিল উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন জাহাঙ্গীর। তার ইশারায় উপজেলা কর্মকর্তাদের বদলি করা হতো। জেলা সাংবাদিক নিয়োগেও ছিল জাহাঙ্গীরের হাত। ফলে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি সব দপ্তরে বিশেষ কদর পেতেন জাহাঙ্গীরের নির্দেশে নিয়োগ পাওয়া ওই সাংবাদিকরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে নিজের বাড়ির রাস্তা পাকা করে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। ভাগিয়ে নিয়েছেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও। তার বড় ভাই মীর হোসেন মিরন ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মীর হোসেনকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে ভাগিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, তার আরেক ভাই আলমগীর হোসেন ছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা। তাকেও জোর করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনবার খিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বানান। এ ছাড়া নিজের ভাগিনা মাসুদুর রহমান শিপনকে জেলা পরিষদের দ্বিতীয়বারের মতো সদস্য বানান। প্রথমবার সদস্য বানানোর জন্য ব্যালট পেপার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু তৎকালীন ইউএনও জাহিদুর রহমান তাতে বাধা দিলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হবার পরও জাহিদুর রহমানকে জামায়াত আখ্যা দিয়ে চাটখিল থেকে প্রত্যাহার করান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বেড়ানো জাহাঙ্গীর তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি ঢাকার ডেমরায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ওই সংসারে আলভি নামে তার এক ছেলে রয়েছে। এরপর আরো একটি বিয়ে করেন তিনি। সেই বিয়েটি হয় নাটকীয়ভাবে। জাহাঙ্গীরের যিনি তৃতীয় স্ত্রী হয়েছেন, তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেতে সুপারিশের জন্য তার বাবা সঙ্গে জাহাঙ্গীরের কাছে এসেছিলেন। তখন জাহাঙ্গীর তার সৌন্দর্য দেখে বিয়ে করে ফেলেন। পরে ওই স্ত্রীর নামে ২০১৯ সালে নোয়াখালীর জেলা শহরে হরিনারায়ণপুরে ১০ শতক জমি ও সাত তলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করেন। এ ছাড়া চাটখিল পৌরসভার ভীরপুরে পেট্রোল পাম্প, খিলপাড়া বাজারে দোকান ভিটে রয়েছে তার নামে। গ্রামের বাড়ি নাহারখিলেও রয়েছে তিন তলা বাড়ি।

Share this post

PinIt
scroll to top