দেশের তথ্য ডেস্কঃ
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভৈরব ত্রিমোহনীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মুজাদখালী নদীতে ঘুরছে কুমির। ফলে উপজেলার পাঁচ গ্রামে মানুষের মাঝে কুমির আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদীতে গোসল করতে নেমে কুমিরের আক্রমণ থেকে প্রাণে বাঁচলেন দুজন।
জানা গেছে, শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের মুজাদখালী নদীর তীরবর্তী নলামারা গ্রামের সাইফুল ইসলাম নদীতে মাছ ধরতে যান। হঠাৎ একটি কুমির তার সামনে ভেসে ওঠে। মাছ ধরা বাদ দিয়ে ভয়ে বাড়ি চলে আসেন তিনি।
এ ছাড়া নারায়ণ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি নদীতে গোসল করতে যাই। পানিতে নামলে একটি বড় কুমির লেজ দিয়ে আঘাত করে আমাকে। আমার হাত ও পায়ে ক্ষতের দাগ রয়েছে। কোনো মতে প্রাণে বেঁচেছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়রাবাদ শ্মশানসংলগ্ন এলাকায় একটি কুমির নদীতে ভাসছে। কুমিরটি ওই স্থান থেকে নলামার সামনের দিকে যেতে থাকে। এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। জয়রাবাদ দক্ষিণপাড়ার মুজাদখালী নদীতে বিভিন্ন হাঁস থাকায় সেখানে কুমিরটি অবস্থান নেয়।
জানা গেছে, মুজাদখালী নদী সুন্দরবন হয়ে খুলনার রুপসা ও শিপসা নদীর সঙ্গে মিশেছে। তাই সুন্দরবন থেকে নদী হয়ে লোকালয়েও চলে আসছে কুমির। ফলে কুমিরের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে আছেন এ অঞ্চলের জেলেরা। কুমিরের ভয়ে নদীতে নামা বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।
স্থানীয় জেলেরা জানান, বিভিন্ন নদ-নদীতে বড় বড় কুমির বিচরণ করছে। কুমিরের আক্রমণে আহত হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। ভয়ে এলাকার লোকজন নদীতে নামছে না। মাছও ধরতে পারছেন না। এতে জেলে পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে দুর্দিন।
পল্লব বিশ্বাস নামে একজন জানান, বছরের এ সময়টায় শিবসা, হাপর খালী, ভদ্রাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে কুমিরের আনাগোনা বেড়ে যায়। সম্প্রতি উপজেলার জয়রাবাদ গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ বিশ্বাস নদীতে গোসল করতে গিয়ে কুমিরের আক্রমণে আহত হন। এ ছাড়া উপজেলার মুজাদখালী নদীতে খেয়া পারাপারে সময় কুমির আক্রমণ করে বিমল কান্তি নামে একজনকে। এ এলাকায় কুমিরের বিচরণ দেখে অনেকেই নদীতে গোসল করতে নামছে না।
আরেক বাসিন্দা সুদিপ্ত কুমার বলেন, নদীতে মাছ ধরে কোনোমতে সংসার চালাই। কিন্তু প্রায়ই মুজাদখালী নদীতে কুমির ভাসছে। আবার ডাঙায়ও উঠে আসছে। ভয়ে নদীতে নামতে পারছি না। পারিবারের সদস্যরা মাছ ধরতে যেতে দিচ্ছে না।
ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ নদীর ঘাটে নামতে পারছে না। কেউ কোনো কাজ করতে পারছে না। মানুষের মাঝে কুমির আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বন বিভাগের লোক এসে কুমির মারতে নিষেধ করেছে।
নদীতে কুমির দেখার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, আমি জেলেদের সতর্ক করেছি। এ ছাড়া উপজেলার পাঁচটি জেলে পল্লীতে খবর দেওয়া হয়েছে। জয়রাবাদ ও নলামারা এলাকায় সব বয়সের মানুষদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলব আমরা।
সিদ্ধিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন, এলাকাবাসীদের ও জেলেদের সতর্কতার সঙ্গে নদীতে নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলেদের সতর্কতার সঙ্গে মাছ ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম আবু নওশাদ কালবেলাকে বলেন, কুমির তো সীমানা চেনে না, খাদ্য ঘাটতি পড়লেই তারা ওপরের নদ-নদীতে চলে আসে। আমরা বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।