দেশের তথ্য ডেস্কঃ
কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ, কিন্তু এর আগে দল গড়তে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা নির্বাচকদের। কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেবেন—এই মধুর টানাপড়েন নয়, তাঁদের বরং ‘নন-পারফরমার’ ক্রিকেটার বেছে নেওয়ার বিড়ম্বনার মধ্য দিয়েই পার করতে হয়েছে পুরো দল নির্বাচনের সময়টি। ওই সময়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান সংকট আরো ফুটে উঠতে দেখেন ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘আমরা লিটন বা সৌম্যর বাইরেই যেতে পারলাম না। বলা ভালো, সাহস পেলাম না।
কারণ এর বাইরে কাউকে নিতে হলে আমাদের হয়তো (পারভেজ হোসেন) ইমনের কাছে যেতে হতো। সে-ও প্রস্তুত কি না, সে বিষয়েও কিন্তু আমরা নিশ্চিত নই।’
বিড়ম্বনার তরুণ এই ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মানানসই কি না, সে বিষয়ে নির্বাচকরা অন্ধকারে ছিলেন বলেই ব্যর্থরা বিশ্বকাপ মিছিলে সামনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন। তাই এই ব্যর্থদের ব্যর্থতাই যখন আবার তাঁকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনবে বলে আশ্বস্ত হতে পারেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের মতো ক্রিকেটার, তখন তাতে খুব একটা দোষও খুঁজে পান না ফাহিম, ‘দোষ দেওয়ার ব্যাপার নয়।
এটি ওর পর্যবেক্ষণ। চোখের সামনে যা দেখছে, সেটিই বলছে। আমরা সবাই জানি, খুব খোঁজাখুঁজি করেও খেলোয়াড় ওই ১০-১২, ১৫ জনই আছে। এবার বিশ্বকাপের দল গড়ার সময়ও তো তা-ই দেখলাম।
অবস্থাটি আমাদের কী!’
এই অবস্থায় নিজের একটি ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করা সাইফউদ্দিন গত পরশু সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সত্যি বলতে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক (মানের) খুব বেশি ক্রিকেটার নেই, ২০ থেকে ২৫ জনের বাইরে। আমি যদি ফিট থাকি, সুযোগ আসবে।’ একজন খেলোয়াড়ের এমন মনোভাবে অবশ্য সায় নেই সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের, ‘একজন খেলোয়াড়ের এ রকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকা ঠিক নয়। হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাসী হওয়াটা ভালো। তাই বলে এমন অ্যাটিটিউডও সমর্থনযোগ্য নয়।
যদিও সাইফউদ্দিনের মুখ দিয়ে বের হওয়া রূঢ় সত্যিও আড়াল করার উপায় নেই মিনহাজুলের, ‘এটি তো সত্যি কথা যে আমাদের খেলোয়াড় সংখ্যা খুবই সীমিত। আমাদের ২৭-৩০ জন ক্রিকেটারের মধ্যেই নড়াচড়া করতে হয়। মানসম্পন্ন খেলোয়াড় খুঁজতে গেলে এর মধ্যেই আছে। এর থেকেই তিন সংস্করণের খেলোয়াড় বাছতে হয়।’ সংকট থেকে উত্তরণে একটি সমাধানই দেখেন বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক, ‘আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো শক্তিশালী হওয়া দরকার। এটিই সবচেয়ে জরুরি। আমাদের তো কোনো কাঠামোই নেই। অন্তত চারটি সেন্টারে হাইপারফরম্যান্স ইউনিট দরকার। প্রতিটি সেন্টারে ২০ জন করে খেলোয়াড়কে তৈরি করার কার্যক্রম চালানো গেলে সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ৮০ হয়। এর মধ্যে ৫০ জনও যদি কোয়ালিটি ক্রিকেটার পাই, তা-ও তো কম পাওয়া নয়।’
কিন্তু মানসম্পন্ন খেলোয়াড় পেতে তো নিয়মিত কার্যক্রম থাকা চাই। ফাহিমের চোখে অবশ্য তেমন কিছু চোখে পড়ে না, ‘টপ লেভেল ক্রিকেটারের সংখ্যা তো খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। ও (সাইফউদ্দিন) যেটি বলেছে, ২০-২৫ জনের কথা। সত্যি কথা বললে আমি ২০-২৫ জনও দেখি না। এই সংখ্যাটি আসলে আরো অনেক কম। (এই কম হওয়ার) কারণও আমরা সবাই জানি। এক জাতীয় দল ছাড়া আর কোনো দলের দিকেই আমরা নজর দিই না। পরবর্তীতে উঠে আসার মতো ক্রিকেটারদের গড়ে তোলার জন্য সিরিয়াস কোনো কর্মসূচি আমরা কখনোই নিইনি।’
এই উঠে না আসার দায় বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির ওপরও বর্তায়। এর প্রধান আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ অবশ্য বিষয়টি দেখেন অন্যভাবে, ‘খেলোয়াড়ের সংকট যে নেই, তা নয়। তবে খুব বেশি সংকটও নেই। আপনি যদি ২০০৬-০৭ সালের দিকে ফিরে যান, তখন একটি সংকট তৈরি হয়েছিল। মুশফিক, সাকিব ও তামিমের মতো অনেক নতুন খেলোয়াড় এলো ওই সময়টায়। ওদের কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার হতে চার-পাঁচ বছর সময় লেগেছে। ওই সময়ের তুলনায় আমি মনে করি আমাদের বর্তমানের পাইপলাইন যথেষ্ট মজবুত আছে। সাকিব-তামিমদেরও তিন-চার বছর লেগেছে তৈরি হতে। এখনকার ছেলেদেরও লাগবে। ওরা সুযোগের অপেক্ষায় আছে।’
এর আগ পর্যন্ত অন্যের ব্যর্থতায় সুযোগের অপেক্ষায় সাইফউদ্দিনও!