ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন

image_102401_1720418602.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। ছবি : কালবেলা
বাংলাদেশে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সোমবার (৮ জুলাই) সকাল ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় বিগত এক বছরের অর্থাৎ জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়কালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৫টি; মরদেহ উদ্ধার (হত্যাকাণ্ড বলে প্রতীয়মান) হয়েছে ৭ জনের; হত্যার চেষ্টা হয়েছে ১০ জনকে; হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে ৩৬ জনকে; হামলা বা শারীরিক নির্যাতন বা জখম হয়েছে ৪৭৯ জন; চাঁদা দাবি করা হয়েছে ১১ জনের কাছ থেকে; বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর , লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১০২টি; বসতবাড়ি, জমিজমা দখলের ঘটনা ঘটেছে ৪৭টি; বসতবাড়ি, জমিজমা দখলের, উচ্ছেদের তৎপরতা ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে ৪৫টি; দেশত্যাগের হুমকি বা বাধ্য করার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১১টি।’

এছাড়া দেবোত্তর, মন্দির, গীর্জার সম্পত্তি দখল ও দখলের চেষ্টার ঘটনা হয়েছে ১৫টি; শশ্মশানভূমি দখল বা দখলের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৭টি; মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ৯৪টি; প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে ৪০টি; গণধর্ষণ, ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ২৫টি; অপহরণ, নিখোঁজ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের ঘটনা ঘটেছে ১২টি, ধর্ম অবমাননার কল্পিত অভিযোগে আটক হয়েছে ৮ জন; জাতীয় নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে ৩২টি; স্থানীয় নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে ৫টি; অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এ নিয়ে মোট ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪৫টি।’ যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এ সংখ্যাটি সাম্প্রদায়িক চালচিত্রের একটি আংশিক অংশমাত্র । বিগত বছরগুলোর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা যায়, সহিংসতার ঘটনার খুব বেশী হেরফের আজও হয়নি। এহেন বিরাজমান সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে লক্ষ্মণীয় ১৯৭০ এর নির্বাচনকালীন সময়ের প্রায় ১৯% সংখ্যালঘু ৮.৬%-এ নেমে এসেছে।’

রানা দাশগুপ্ত অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশেষ করে সংখ্যালঘু স্বর্ণব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার, মন্দির ও উপাসনালয় এবং বিগ্রহ, সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি ও স্কুল কলেছে পড়ুয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার পরিবেশ একেবারেই সংকুচিত করা হয়েছে। পুলিশ প্রহরায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলাকালে সন্ত্রাসীদের কাউকে জনগণ আটক করলে পুলিশ প্রশাসন তাকে ‘পাগল’ বানিয়ে মূলত সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকেই উৎসাহিত করে। ফেইসবুক হ্যাক করে ধর্ম অবমাননার কল্পিত অভিযোগে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িকে আক্রমণের শিকার করছে, অহেতুক যুবকসম্প্রদায়কে হয়রানি করছে।’

সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই ভূমিকেন্দ্রিক বলে জানান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ নেতা। তিনি আরও বলেন, ‘ভূমি জবরদখলের বদমতলবে ভূমিখেকো সন্ত্রাসীরা প্রায় বেশিরভাগ সময় নানান রাজনৈতিক দলের প্রভাবপুষ্ট হয়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এ সাম্প্রদায়িক সহিংস আক্রমণ পরিচালনা করছে। সিটি কর্পোরেশনের মতো সরকারী সংস্থাও জমি জবরদখলের ঘৃণ্য কাজে জড়িত। ঢাকায় অতিসাম্প্রতিককালে বংশালের আগাসাদেক লেনের মিরনজিল্লা হরিজন পল্লী, যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের তেলেগু কলোনী এবং কমলাপুর রেল লাইনের পাশের হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের পুর্ব্বাসনের কোনো ব্যবস্থা না করে তাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের অপপ্রয়াসের দুঃখজনক অমানবিক ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।’

Share this post

PinIt
scroll to top