চাঁদা না দেওয়ায় থানায় ডেকে ব্যবসায়ীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ

image_102074_1720324950.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

খুলনার কয়রায় চাঁদা না দেওয়ায় গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যবসায়ীকে থানায় ডেকে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (৬ জুলাই) খুলনা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাতে কয়রা থানায় মারধরের ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের মোকসেদ সানার ছেলে। তিনি একসময় সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত ছিলেন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন গোলাম মোস্তফা।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে কয়রা থানার এসআই তারেক ও কনস্টেবল মহসীন পল্লীমঙ্গল বাজারে গোলাম মোস্তফার দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। এর আগেও ওই দোকানে গিয়ে মোবাইলে জুয়া খেলার অভিযোগে চাঁদা আদায় করেন ওই এসআই। ঘটনার দিন চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফাকে শাসিয়ে থানায় চলে আসেন তারা। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমানের মাধ্যমে কয়রা থানার ওসি মিজানুর রহমান ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফাকে থানায় ডেকে পাঠান। একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইউপি সদস্যের সঙ্গে ওসির কক্ষে উপস্থিত হন মোস্তফা। এ সময় ওসি তার কাছে ঘটনা জানতে চাইলে এসআইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ করেন তিনি। একপর্যায়ে ওসি একজন কনস্টেবলকে ডেকে গোলাম মোস্তফাকে হাজতে ঢুকাতে নির্দেশ দেন। ওসির কক্ষ থেকে তাকে বের করার পর ওই কক্ষের সামনেই এসআই তারেক, এ এসআই শাহজানসহ কয়েকজন বেধড়ক মারপিট করেন তাকে। এ সময় গোলাম মোস্তফা চিৎকার করে ওসির কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি, উল্টো ওসি তাকে আরও মারপিটের নির্দেশ দেন এবং ক্রস ফায়ারের হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

গোলাম মোস্তফা বলেন, একসময় আমি জলদস্যু আনারুল বাহিনীর সদস্য ছিলাম। ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বাহিনী প্রধানসহ ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণ করি। পরে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আর্থিক সহযোগিতায় এলাকায় একটি ছোট চায়ের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। সেখানে এলাকার অনেক যুবক এসে বসে। কারা মোবাইলে জুয়া খেলে এটা আমার জানা ছিল না। কিন্তু পুলিশ এসে নিয়মিত আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। ভয়ে একবার তাদেরকে ৫ হাজার টাকাও দিয়েছি। ঘটনার দিন আবারও চাঁদা নিতে আসলে দিতে অস্বীকৃতি জানালে থানায় ডেকে আমাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে থানার একজন এসআইয়ের সঙ্গে গোলাম মোস্তফার কথাকাটাকাটি হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমার মাধ্যমে গোলাম মোস্তফাকে থানায় ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। প্রতিবাদ করেও থামানো যায়নি। ঘটনাটি দুঃখজনক।

জানতে চাইলে এসআই তারেক বলেন, একটি চুরির ঘটনা তদন্তে যাওয়ার পথে পল্লীমঙ্গল বাজারে গোলাম মোস্তফার দোকানে যাই। চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ততার সন্দেহে গোলাম মোস্তফার ছোট ভাইয়ের মোবাইল অনুসন্ধান করতে চাইলে তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়। চাঁদা চাওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পরে থানায় ডেকে মারপিট করা হয়েছে কিনা জানি না। তবে ওসির কক্ষের সামনে চিৎকারের করতে শুনেছি।

কয়রা থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, একটি মামলার তদন্তে গিয়ে থানার একজন এসআইয়ের সঙ্গে গোলাম মোস্তফার কথাকাটাকাটি হয়। বিষয়টি জানার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তাকে থানায় ডেকে এনে মীমাংসা করে দেওয়া হয়। তাকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

খুলনা পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমান বলেন, মীমাংসার কথা থানায় ডেকে মারধরের ঘটনা দুঃখজনক। অভিযোগ পেয়েছি, যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top