দেশের তথ্য ডেস্কঃ
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দিচ্ছেন পরিছন্নতাকর্মী (আয়া) মনি তালুকদার। ছবি : কালের কণ্ঠ
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে জনবল না থাকায় ৪৮টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সুচিকিৎসার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এনিয়ে সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সাবেক চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার হাওর বেষ্টিত ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই স্বাস্ব্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি। ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডের ৪৮ টি গ্রামে ৫০ হাজার মানুষের বসবাস।
তাদের চিকিৎসার জন্য এই একমাত্র আশ্রয়স্থল। কিন্তু এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক ও ভিজিটর না থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ।
সামান্য এক্সিডেন্ট, কাটাছেড়া ও ডেলিভারির জন্য যেতে হয় জেলা, উপজেলা সদর আর না হয় পাশ্ববর্তী জামালগঞ্জ উপজেলা সদর হাসপাতালে। স্থানীয় ফামেসী অথবা গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে যান অনেকেই।
ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল সংকট থাকার কারণে চিকিৎসা দিচ্ছেন পরিছন্নতাকর্মী (আয়া) মনি তালুকদার ও কেয়ার বাংলাদেশ পিসিএসবি (প্রাইভেট স্কিল ভাট এটেন্ডেট) মোছা. শালিমা আক্তার। তাদের কাছ থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বিভিন্ন গ্রামের চিকিৎসা নিতে আসা নানান বয়সের মানুষ।
এমন পরিস্থিতিতে সচেতন মহল সুচিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথছ এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন সেকমো (সাব এসিন্ডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার), ভিজিটর ও পরিছন্নতা কর্মী (আয়া) পদ রয়েছে।
কিন্তু আয়া ছাড়া কেউই নেই।
পরিছন্নতা কর্মী মনি তালুকদার জানান, ‘আমি দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দেখা শুনা ও পরিষ্কার পরিছন্ন রাখি। পাশাপাশি ডাক্তার ভিজিটর না থাকায় যতটুকু পারি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।’ আপনি কিভাবে চিকিৎসা দেন আপনারা তো আর ডাক্তার না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ভিজিটরের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা দেন তিনি।’
শালিমা আক্তার জানান, বাংলাদেশ কেয়ার থেকে ডেলিভারি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি।
সেই প্রশিক্ষণ তিনি এখানে ভিজিটর না থাকায় কাজে লাগাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শুপ্রভা দাস, মালতি রানী দাস, সুরবাল দাস জানান, ‘আমরা ভাটি এলাকার মানুষ সারা বছরেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকি উপজেলার সঙ্গে। বর্ষায় নৌকায় চলাচল করতে হয়। ডাক্তার, ভিজিটর না থাকায় পরিছন্নতা কর্মী (আয়া) দিয়ে কি চিকিৎসা হয় সে কি কিছু জানে। তারপরও তারা যে চিকিৎসা দেয় তাই নেই। সুচিকিৎসা তো পাই না ডেলিভারি করানো হয় না। আমরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি যেন দেখার কেউ নেই।’
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনতুস দাশ জানান, ‘চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ডাক্তার ও ভিজিটর যদি না থাকে, তাহলে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবন দিয়ে কী হবে। মানুষের দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে আর সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি করছি।’
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামের শিশু, গর্ববতি নারী ও বৃদ্ধ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। কিন্তু চিকিৎসক ও ভিজিটর না থাকায় সুচিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। একজন ভিজিটর না থাকায় এখানে ডেলিভারী যেমন হচ্ছে না, তেমনি ডাক্তার না থাকায় সুচিকিৎসা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।’
জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে জনবল দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তবে তিনি এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান। আর পরিছন্নতাকর্মী চিকিৎসা দিচ্ছেন বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলেও জানান তিনি।