কোটা-পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল বিএনপি

image_101828_1720248723.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে তাতে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে জাতীয় পেনশন স্কিম বাতিলের দাবি জানিয়েছেন দলটি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার (৬ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

তিনি বলেন, গত কয়েক দিন যাবৎ ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলন করছে। আমরা বিশ্বাস করি মুক্তিযোদ্ধারা জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবসসমূহ এমনকি তাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানের সহিত দাফন সম্পূর্ণ করা হয়। এগুলো তাদের প্রাপ্য, এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ নানান সুবিধা আছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ করা। সাংবিধানিকভাবে ও আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান। কিন্তু সংবিধানের ২৮ (৪) এবং ২৯ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী ও নাগরিকদের পিছিয়ে পড়া অংশ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এর বাহিরে ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রযুক্তি ও মেধানির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় জাতি হিসাবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থসহ কোনো শ্রেণীতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না এবং মেধা ভিত্তিক বৈষম্যহীন জাতি ও সমাজ বিনির্মানের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

কোটা-পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল বিএনপি
কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানাবে বিএনপি
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান অবৈধ, অনির্বাচিত, কর্তৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে অর্থাৎ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জনগণের ন্যায্য দাবিসমূহ দমিয়ে রাখার ঘৃণ্য পুরোনো কৌশলেই তারা ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞান ভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি সমূহের সঙ্গে আমারা একমত।

তিনি বলেন, আইন ও বিচার বিভাগের দোহাই দিয়ে ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবি সমূহকে দমানোর সকল অপচেষ্টাই ব্যর্থ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ, ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলন কখনোই দমানো যায় নয়। আমরা আশা করি সরকার সময় থাকতে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবিসমূহ মেনে নেবে। ছাত্রদের ন্যায়সংগত যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দেশের সব কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও কর্মচারী সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার জন্য দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করে সরকারি পরিপত্র জারি করেছে। এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্প্রদায় ও কর্মচারীবৃন্দ এই স্বারক প্রত্যাখান করেছে এবং এর প্রতিবাদ করেছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ সকল প্রকার কার্মকান্ড বন্ধ রেখেছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রকৃতপক্ষে এটি এই দেউলিয়া সরকারের দুর্নীতির আর একটি পথ খুলে দেওয়া। যেহেতু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম সংকটাপন্ন সেইহেতু অন্যান্য খাতসহ শিক্ষকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে এই পেনশনের টাকা তুলে নিতে চাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সর্বজনিন পেনশন স্কিমের ৪টি প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে ৪০ হাজার আবেদন জমা পড়ছে বলে গণমাধ্যম সুত্রে (বিবিসি) প্রকাশিত হয়েছে। সাবেক অর্থ মন্ত্রী লোটাস কামাল সংসদে এই বিল উত্থাপনের ভাষণে বলেছিলেন সর্বজনিন পেনশন স্কিমের টাকা রাখবার জন্য সরকার জায়গা খুঁজে পাবে না। সরকারের আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে সর্বজনিন পেনশন স্কিম নামে নতুন স্কিম চালু করা সরকারের দুর্বল আর্থিক খাত মেরামত করার একটা কৌশল। এটি এই অবৈধ ও আর্থিকভাবে দেওলিয়া সরকারের আরেকটি নূতন লুটপাট স্কিম যার নাম পেনশন স্কিম, প্রত্যয় স্কিম ইত্যাদি।

তিনি বলেন, সরকার এই স্কিম বেসরকারি, স্বশাসিত রাষ্ট্রয়াত্ব ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সমূহে সোয়া চার লাখ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে চালু করতে চায়।

বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে অর্থাৎ অংশীজনদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই স্বেচ্ছাচারী কায়দায় এই বিধান বাধ্যতামূলকভাবে চালু করতে চাচ্ছে অবৈধ সরকার। অথচ এই আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত প্যারায় এটি অপশনাল (ইচ্ছাধীন) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে শিক্ষক সমাজের যে আন্দোলন ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই যৌক্তিক ও সমর্থন যোগ্য।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতাকে পুঁজি করে শাসক গোষ্ঠীর আশির্বাদ পুষ্ট এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীক লুটেরা সিন্ডিকেট ও কিছু কিছু সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীরা সীমাহীন লুটপাট করছে। ব্যাংক ও সকল আর্থিক খাত সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে তারা বিদেশে অর্থ পাচার করছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নিচ্ছে না। সেরকম পরিস্থিতিতে নাগরিকরা সারাজীবনের অর্জিত সম্পদ কোন ভরসায় এই নতুন লুটপাট স্কিমে বিনিয়োগ করবে?

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায় শূন্য, ব্যাংকিং খাত প্রায় দেউলিয়া, এরকম লুটেরা তন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য এরকম পেনশন স্কিমের মতো আরো স্কিম চালু করে জনগণের পকেট শূন্যে করতে চায় এই লুটেরা সরকার। সরকার তথাকথিত উন্নয়নের নামে জনগণের ঘাড়ে ব্যয়ের বোঝা চাপাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের বুলি যদি এতই শক্তিশালী হয়ে থাকে তাহলে পেনশন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা।

অতএব, জনগণ সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও অনৈতিক তথাকথিত পেনশন স্কিমসহ ইত্যকার সকল প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন সমর্থন করছি এবং অবিলম্বে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

Share this post

PinIt
scroll to top