দেশের তথ্য ডেস্কঃ
গতকাল মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে প্রগ্রেসোতের সৈকতে গ্রীক দেবতা পসেইডনের একটি মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক ব্যক্তি। ছবি : এএফপি
হারিকেন বেরিল ক্যারিবিয়ানজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞের পর মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে আঘাত হেনেছে। শুক্রবারের সকালে এটি ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে ক্যাটাগরি ২ হারিকেন হিসেবে মেক্সিকোতে আছড়ে পরে।
হারিকেনটি এখন দুর্বল হয়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ে পরিণিত হয়েছে। তবে সপ্তাহের শেষে মেক্সিকো উপসাগরে পুনরায় ঝড়ে তীব্র শক্তি সঞ্চয় করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেরিলের কারণে মেক্সিকোর ইউকাটানের ক্যানকুন এবং পর্যটন এলাকা তুলুমে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। প্রবল বাতাসের কারণে গাছপালা ভেঙে পড়ে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।
মেক্সিকোর নাগরিক সুরক্ষা প্রধান লরা ভেলাজকুয়েজ বলেছেন, রবিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা হবে।
তুলুমের এক বাসিন্দা ক্যারোলিনা ভাজকেজ বলেন, ‘আমার ছোট্ট বাড়িতে একটি গাছ পড়ে গেছে, বাড়ির ছাদের অর্ধেকে ফাটল ধরেছে।’ ফার্নান্দো ট্রেভিনো আরো একজন স্থানীয় কর্মচারী বলেছেন, ‘সকল সুরক্ষা ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছিল।’
বেরিল আঘাত হানার আগে মেক্সিকোর স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, হোটেলের জানালাগুলোতে বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং ক্ষতির মুখে থাকা অঞ্চলগুলোতে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া ইউকাটান উপদ্বীপে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং ন্যাশনাল গার্ডের ৮ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, পর্যটন এলাকার হোটেল থেকে শত শত পর্যটককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং উপকূলের হলবক্স দ্বীপ থেকে ৩ হাজারের বেশি পর্যটনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে।
হারিকেন বেরিলের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়?
দুর্বল হয়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ে পরিণিত হয়েছে রেবিল। ঝড়টি মেক্সিকো উপসাগরের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে এবং এই সাপ্তাহের শেষে উত্তর-পূর্ব মেক্সিকো এবং দক্ষিণ টেক্সাসের দিকে অগ্রসর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যায় আবার স্থলভাগে আছড়ে পড়বে এবং ঝড়টি আবার হারিকেনে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট রাজ্যের উপসাগরীয় উপকূলের কাছাকাছি বসবাসকারীদের সতর্ক করেছেন। ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সতর্ক করে বলেছে, উত্তর আটলান্টিকে এই বছর সাতটি বড় হারিকেন সৃষ্টি হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার বেরিল তাণ্ডবে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে বাড়িঘর এবং ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।বেরিল মহাশক্তি নিয়ে প্রথম আঘাত হানে ক্যারিবীয় ইউনিয়ন দ্বীপে। সেখানে সব বাড়িঘর ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতিবেগে একটানা বাতাসসহ চার ক্যাটাগরি হারিকেন হিসেবে বেরিল দ্বীপটিতে আঘাত হানে। সেখানে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। অনেকে সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস, গ্রেনাডা এবং সেন্ট লুসিয়াতে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডব দেখে স্থানীয়রা হতবাক হয়ে গেছেন।
সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্সের কাছে অবস্থিত দ্বীপের প্রতিটি বাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। মহাশক্তিশালী ঝড় বেরিলের ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে গোটা ইউনিয়ন দ্বীপে। প্রায় পুরো দ্বীপের বাসিন্দারা এখন গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন বলে একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা।
এরপর হারিকেন বেরিল গত বুধবার জ্যামাইকায় আঘাত হানে অন্যান্য ক্যারিবিয়ান দেশগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর। জ্যামাইকার দক্ষিণ উপকূলকে কেন্দ্র করে বেরিল আঘাত হেনেছিল। বন্যাপ্রবণ এই এলাকাটি থেকে বাসিন্দাদের আগেই সরানো শুরু করেছিলেন জরুরি বিভাগের কর্মীরা। কিছুটা দুর্বল হওয়ার আগে শক্তিশালী ক্যাটাগরি ৪ ঝড় হিসেবে সেখানে আঘাত হেনেছিল। ঝড়ের পর পূর্ব ক্যারিবিয়ানে ব্যাপক বন্যা এবং শক্তিশালী বাতাসের কারণে বিধ্বস্ত দ্বীপগুলোতে যোগাযোগব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। জ্যামাইকায় ঝড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বেরিলের কারণে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।