দেশের তথ্য ডেস্কঃ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বৃষ্টি হলেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে অর্ধশতাধিক পরিবার। প্রায় দুই বছর ধরে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ইটপাথর দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় গ্রামের প্রভাবশালী আমির হোসেন নামের এক যুবক। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় জমে থাকা পানি শতবছরের পুরোনো ঘাগড়া থেকে বাদাঘাট সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিন স্থানে ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথে দেওয়া বাঁধ দ্রুত অপসারণ না করলে বারবার জমা হওয়া বৃষ্টির পানিতে যোগাযোগের এই সড়ক ভেঙে যাবে। এ ছাড়াও জমে থাকা পানির কারণে গ্রামের একশ বিঘা জমি জলাবদ্ধ অবস্থায় দুই বছর ধরে অনাবাদি থেকে যায়।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, ঘাগড়া গ্রামের লোকজনদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয় এই গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আমির হোসেনের (৩০)। এই বিরোধের জেরে নিজের প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথে স্থায়ী বাঁধ দেয় আমির হোসেন। যার ফলে বর্ষা আসলেই পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয় গ্রামের ৫০টি পরিবারকে। পানিতে ডুবে যায় ঘাগড়া গ্রাম থেকে বাদাঘাট যাওয়ার সড়কও।
অনেক বাড়িঘরের ভেতরে পানি উঠে যাওয়ায় তাদের ছোট ছোট শিশু ও পারিবার পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘরের সামনে হাঁটুপানি থাকায় বৃষ্টির সময় মাসের পর মাস বাধ্য হয়েই তাদের ঘরের ভেতর খাটের ওপর পার করতে হচ্ছে। নর্দমার পানির সঙ্গে বর্ষার পানি মিশে নোংরা হয়ে পড়ে পরিবেশ। কাজের চাপে সেই নোংরা পানি ভেঙে গ্রামের মানুষ যাতায়াত করলেও নারী এবং শিশুরা চলাচল করতে পারছে না। বাড়ির আঙিনায় পানি ওঠায় অনেকেই রান্নাও করতে পারছেন না।
শত্রুতা করে বাঁধ, পানিবন্দি অর্ধশতাধিক পরিবার
ভয়াবহ রূপ নিয়েছে কুড়িগ্রামের বন্যা, সীমাহীন দুর্ভোগ
পানিবন্দি ভুক্তভোগী ঘাগড়া গ্রামের আজিমুন নেছা (৫৫) বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ ছিল। এই পথ দিয়ে সব সময় পানি হাওরে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু আমির হোসেন এই পথে ইটপাথর দিয়ে বাঁধ দিয়ে দিয়েছে। আমির হোসেন প্রভাবশালী হওয়ায় কারও কথা সে শোনে না। আমাদেরকে নিরুপায় হয়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে পানির মধ্যেই থাকতে হয়।
ভুক্তভোগী আব্দুল করিম (৭১) বলেন, আমির হোসেন প্রভাবশালী মানুষ। তার টাকাপয়সা অনেক। সড়কের সঙ্গে সরকারি জায়গা দখল নিয়ে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়। প্রতিবাদ করায় আমির হোসেন গত বছর আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করে। গেল বছর বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ও বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন দুইজন এবং স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য বাঁধ ভেঙে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য বলে গেলেও আমির হোসেন তা করেনি। উল্টো ইটপাথর দিয়ে আরও শক্ত করে বাঁধ দেয়।
ঘাগড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেন মল্লিক (৬০) বলেন, যেখান বাঁধ দিয়েছে এদিক দিয়ে একটা খাল ছিল। কিন্তু গত দুই বছর আগে উত্তর হাটির আমির হোসেন এই জায়গা কিনে এই খাল মাটি ভরাট করে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ করে দেয়। শুধু বন্ধই করেনি, সে ইটপাথর দিয়ে পানি যাওয়ার রাস্তায় স্থায়ীভাবে বাঁধ দেওয়ার কারণে গত দুই বছর ধরে এখানে বসবাসকারী ৫০ পরিবারের মানুষ পানির নিচে বাস করে। এই বাঁধের উত্তরে গ্রামের প্রায় ১০০ বিঘা জমি বর্ষার সময় পানির নিচে থাকে। আমাদের একমাত্র সম্বল আমন ফসল। এখানে বসবাসরত সবাই গরিব। অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবী ও কৃষক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আমির হোসেন বলেন, আমি এই জায়গা কিনে মাটি ভরাট করে বাড়ি তৈরি করছি। এখন এই জায়গা দিয়ে পানি যেতে দিলে বাড়ি ভেঙে যাবে। তাই ইটপাথর দিয়ে বাঁধ দিয়েছি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন জানান, গ্রামবাসী পানি নিষ্কাশনের জন্য আমার কাছে একটি আবেদন নিয়ে আসছিল। আমি এর আগেও বাঁধ ভেঙে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে আসছিলাম। এখন যদি আবার ওই স্থানে বাঁধ দিয়ে থাকে তাহলে আমি সরেজমিনে দেখে অতিদ্রুতই গ্রামের জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধ অপসারণ করে দিয়ে আসব।