যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এবারও বাংলাদেশি বংশোদ্ভত ৪ নারী

image_101616_1720181362.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে বিরাট ভরাডুবি হয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির। অন্যদিকে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। ফলে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা হারাচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টি। এ নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে পার্লামেন্টে যাচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত চার নারী।

বিবিসি জানিয়েছে, এবার নির্বাচনে ৪১২টি আসনে নিজেদের জয় তুলে নিয়েছে দলটি। ফলে বিরাট ব্যবধান তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে লেবার পার্টির। কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১২১টি আসন। যেখানে দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য ৩২৬ আসনে জয় পেতে হয়।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে স্থান পাচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত চার নারী। তারা হলেন রুশনারা আলি, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক এবং আফসানা বেগম। এর আগেও একাধিকবার তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র টিউলিপ সিদ্দিক বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি। শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনে নির্বাচন করা টিউলিপ সিদ্দিক ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ অ্যান্ড ইউনিয়নিস্ট পার্টির ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৪৬২ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে আছেন গ্রিন পার্টি থেকে লরনা জেন রাসেল। তার প্রাপ্ত ভোট ৬ হাজার ৬৩০।

এ ছাড়া রিফর্ম ইউকে থেকে ক্যাথরিন বেকার ২ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়েছেন। বাকি রিজয়েন ইইউ থেকে ক্রিস্টি এলান-কেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে স্কট এমেরি, জোনাথন লুই লিভিংস্টোন (স্বতন্ত্র) উল্লেখযোগ্য ভোট অর্জন করতে পারেননি।

এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আটজন ব্রিটিশ নাগরিক লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। বর্তমানে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আবার মনোনয়ন পেয়েছেন—এমন চারজনের একজন হলেন টিউলিপ সিদ্দিক।

টিউলিপ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার জ্যেষ্ঠ মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি। তিনি ১৯৮২ সালে লন্ডনের মিচামে সেন্ট হেলিয়ার হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ছিল বৈচিত্র্যময়। শৈশবে তিনি বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে থেকেছেন। পরে কিশোর বয়সে লন্ডনে স্থিত হন এবং সেখানেই পড়াশোনা করেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিকস, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।

রুশনারা আলি

টানা পঞ্চমবারের মতো জয় পেলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলি। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলি। দেশটির টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে জিতেছেন তিনি।

শুক্রবার ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, রুশনারা আলি ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭ ভোট।

লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে ২০১০ সাল থেকে এর আগে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১০ থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পরে ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছায়া শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন রুশনারা আলি।

রুপা হক

এ নিয়ে টানা চতুর্থবার লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রুপা হক। ২২ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। অন্যদিকে তার বিপরীতে কনজারভেটিভ প্রার্থী জেমস উইন্ডসর ক্লাইভ পেয়েছেন আট হাজার ৩৪৫ ভোট।

রুপা হক ২০১৬ সালের অক্টোবরে লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তার পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার মুকসেদপুরে। ১৯৬২ সালে তার বাবা মোহাম্মদ হক ও মা রুশনারা হক যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।

রাজনীতিতে আসার আগে তিনি লেখক ও শিক্ষক ছিলেন। রুপা ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার এবং ২০০৪ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি অব কিংস্টনে শিক্ষকতা করেন।

আফসানা বেগম

লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছেন আফসানা বেগম। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী গ্রিন পার্টির নাথালি বেইনফিট পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৭৫ ভোট।

২০১৯ সালের প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য হন আফসানা। ওয়েস্টমিনিস্টার পার্লামেন্টে প্রথম হিজাব পরিহিত সংসদ সদস্য তিনি। ফিলিস্তিন ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জোরালো ভূমিকা রাখেন তিনি। গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েও আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।

আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই। তার বাবা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর মনির আহমেদ। তাদের আদিবাস সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়। তিনি কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতিতে ২০১১ সালে স্নাতক ও ২০১২ সালে সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও কমিউনিটি লিডারশিপের ওপর পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন।

Share this post

PinIt
scroll to top