তহবিল সংকট কাটাতে সুদহার বাড়াচ্ছে ব্যাংক

1720153447-4d2ce9d936405894f1beb529f331b18b.jpg

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

ঋণ বিতরণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার পর থেকে হু হু করে বাড়ছে ঋণ ও আমানতের সুদের হার। আমানত পেতে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে তারল্য সংকটে থাকা কিছু দুর্বল ব্যাংক। কোনো কোনো ব্যাংক পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণ ফেরত দেওয়ার শর্তে আমানত গ্রহণ শুরু করেছে। তার পরও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ আমানত পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বাজারে ৭ বা ৮ শতাংশে আর আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা সাড়ে ৯ শতাংশ সুদ অফার করছি। তার পরও আমানত পাচ্ছি না। তা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বড় বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বন্ডে বিনিয়োগ করছেন।

কারণ সেখানে বিনিয়োগ পুরোপুরি নিরাপদ। এ কারণে এখনো বহু ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারল্য সংকটে থাকা কিছু বেসরকারি ব্যাংক আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করছে। তবে যাদের অবস্থা ভালো তারা এক অঙ্কের সুদহারেও আমানত সংগ্রহ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার আরো বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এপ্রিলে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১৩.৫৫ শতাংশ। মার্চে এই হার ছিল ১৩.১১ শতাংশ। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়েছে ০.৪৪ শতাংশ। আর গত ৯ মাসের হিসাব ধরলে এ সময়ে বেড়েছে ৪.৫৫ শতাংশ।

গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ নির্ধারিত ছিল।

মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সভায় জানিয়েছেন, বর্তমান তহবিল খরচ বিবেচনায় সুদের হার ১৪ শতাংশের নিচে থাকবে বলে তিনি আশা করেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) নেতারা ১৬ মে এক বৈঠকে সুদহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এই মন্তব্য করেন।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত তীব্র তারল্য সংকট বিরাজ করছে। এতে বেশির ভাগ ব্যাংক তাদের কার্যক্রম চালাতে কল মানি মার্কেট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো বেশি সুদের অফার করেও আমানত পাচ্ছে না। কারণ এখনো সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দেশের ঋণখেলাপি, করখেলাপি ও অর্থপাচার একই সূত্রে গাঁথা। ঋণ পুনঃ তফসিল করার কারণে ব্যাংকে অর্থের টান পড়েছে। এর জন্য বন্ডের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে অর্থ সরবরাহ করতে হচ্ছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি কমছে না। তাই শক্ত হাতে খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে মার্চে দেশে ব্যাংক খাতের বাইরে বা মানুষের হাতে নগদ অর্থ ছিল দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। ঠিক এক বছর পর চলতি বছরের মার্চের শেষে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে নগদ অর্থ বাড়ল ছয় হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।

Share this post

PinIt
scroll to top