যুক্তরাজ্যে আগামী পাঁচ বছর কারা ক্ষমতায় থাকবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৃহস্পতিবার ভোট দেবে দেশটির নাগরিকরা। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টা) শুরু হবে ভোটগ্রহণ এবং চলবে রাত ১০টা (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা) পর্যন্ত। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি ছাড়াও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টিসহ অর্ধশতাধিক দল অংশ নিচ্ছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে গত ২২ মে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
এবারের নির্বাচনে অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ৩৫টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র একজন করে। আগাম ভোট, নির্বাচনী ইস্যুসহ একাধিক কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচন, অন্যদিকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী।
ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডজুড়ে ৬৫০টি নির্বাচনী এলাকায় চার হাজার ৫০০-এরও বেশি প্রার্থী লড়াই করবেন।
দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় আগামী ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে ৩৫.৭ শতাংশ প্রার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। রেকর্ড ভেঙে এবারের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থীসংখ্যা (৪৫১৫ জন) ২০১০ সালের নির্বাচনের (৪১৫০ জন) প্রার্থীর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ফলে একেকটি আসনে গড়ে সাতজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩১৭টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ৪৫৯ জন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের আগাম নির্বাচনের ঘোষণায় নড়েচড়ে বসে দেশটির অন্যতম প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। জরিপের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১৪ বছর পর আবারও বিরোধী দল লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসতে পারে। তবে ভরাডুবির আশঙ্কা পাত্তা দিতে রাজি নন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। জয়ের ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক জরিপের ওপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণে বলা হয়, হাউস অব কমন্সে বর্তমানে যাদের ৩৬৫ আসন রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল হয়েও তারা এবার মাত্র ৫৩ আসন পাবে।
পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে লেবার পার্টি পাবে ৫১৬ আসন। এমনকি নিজের আসনেও হেরে যেতে পারেন ঋষি সুনাক।বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, অভিবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যু এবারের নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে, তাদের যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস সরকার গঠন ও দলনেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আহ্বান জানাবেন। প্রধান বিরোধী দল হবে নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দল এবং নেতা হবে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। যদি কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পায় সে ক্ষেত্রে সেটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে। তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দল অন্য দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে। আবার তারা সংখ্যালঘু হিসেবেও সরকার গঠন করতে পারবে। তবে পার্লামেন্টে কোনো আইন পাস করতে হলে অন্যান্য দলের ভোট নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।
এদিকে এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বর্তমান এমপি রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও আফসানা বেগম লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এ ছাড়া আরো ৩০ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।