কুলাউড়ার ৪৮ বিদ্যালয়ে পানি

1720004137-87de83bd28bde8cf6157420bc0f82d48.jpg

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

ভারী বর্ষণে, উজানের ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। ছুটি শেষে বুধবার দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলেছে। মৌলভীবাজারের বন্যাকবলিত কুলাউড়া উপজেলার ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি স্কুল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ওইসকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম আবার সচল করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে বন্যার পানি প্রবেশ করায় স্কুলগুলোতে লেখাপড়া কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কোথাও সামান্য কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসতে পেরেছে। এমনও বিদ্যালয় রয়েছে সেখানে কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যায়নি। বিশেষ করে ভারী বর্ষণের মধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে এই অবস্থা চলছে।

এসব কারণে ৪৮টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম সচল করা যায়নি।সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানিতে পৌর শহরের তিনটি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি ও উপজেলা পরিষদের ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা সড়কে প্রায় দুই ফুট পানি রয়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

পৌর এলাকার ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়, এলজিইডি কার্যালয় এবং কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে পানি প্রবেশ করায় দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার ৬৩ জন মানুষ ও উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।এদিকে কুলাউড়ায় বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এখানকার মানুষের বাসাবাড়িসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ডুবে আছে।

এতে করে এখনও স্বাভাবিক হয়নি এ উপজেলার মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা। বন্যার শুরু থেকে জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা ও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই বন্যার্তদের পাশে রয়েছেন।

হাকালুকি হাওর তীরের ভূকশিমইল, বাদে ভূকশিমইল, নওয়াগাঁও, রহমানিয়া, শাহমীর, উত্তর শশারকান্দি, শশারকান্দি, কালেশার, জাবদা, কাইরচক, মদনগৌরী, গৌঁড়করণ, মুক্তাজিপুর, কানেহাত, মনসুরগঞ্জ, চিলারকান্দি, আমতৈল, রাউৎগাঁও, গৌরিশংকর, আলমপুর, রহমত মিয়া, মীরশংকর, রাবেয়া আদর্শ, মুহিবুর রহমান, শংকরপুর, ছকাপন, গুপ্তগ্রাম ও ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা কবলিত হয়েছে। ওইসকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের নিচতলায় হাঁটুপানি উঠেছে।আশ্রয়কেন্দ্র হলো- রাবেয়া আদর্শ, বশিরুল হোসেন, কুলাউড়া গ্রাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভূকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, শ্রীপুর জালালিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, ইউসুফ তৈয়বুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠান।

ভূকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এসএসসি পরীক্ষার্থী আতাউর রহমান লাবিব বলেন, ‘বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত। পানি কিছুটা কমলে বাড়ি ফিরলেও সাপ বিচ্ছুর ভয়ে আবারো আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। বন্যার পানি পুরোপুরি না কমলে বাড়িতে যাবো না। বন্যার কারণে অনেক ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা বলেন, উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বুধবার পর্যন্ত ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ের দুই তলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আমাদের কার্যালয়ে গত ১৬দিন ধরে পানি ঢুকে যাওয়ায় রেলওয়ে জুনিয়র স্কুলে অস্থায়ীভাবে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাচ্ছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১৩ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছি। এছাড়া বন্যা কবলিত স্কুলে ৬ষ্ঠ- নবম শ্রেণির ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন বলেন, কুলাউড়ায় পানিবন্দি মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা চাল বরাদ্দ পেয়েছি। ইতোমধ্যে দুর্গত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ ও ত্রাণ কার্যক্রম চলমান আছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ দল প্রস্তুত রয়েছে। প্রশাসনের লোক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রসহ পানিবন্দি এলাকার মানুষকে ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি। যেসব এলাকায় বেশি পানি সেখানে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে ওই সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখতে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছি।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৌরভ গোস্বামী বলেন, ‘কিছু বিদ্যালয় থেকে পানি নেমে গিয়েছিল। কিন্তু তিন দিনের ভারী বর্ষণে আবারও প্লাবিত হয়েছে।’

ভূকশিমইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফখর উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের সামনের রাস্তা থেকে পানি নেমে গিয়েছিল। দুই-তিন আগে ক্লাসরুমগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাও হয়। তবে গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে পানি আবার বেড়ে সব ডুবে গেছে। ক্লাসরুমের ভেতর এখন প্রায় এক ফুট পানি জমে আছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢল নামার কারণে নদ-নদী ও হাওরের পানি আবারও বাড়ছে। কুলাউড়া ও জুড়ীর পানি হাকালুকি হাওরে গিয়ে পড়ে। কিন্তু হাওরের পানি ধীর গতিতে নামছে। ওই হাওরের পানি নামে কুশিয়ারা নদী দিয়ে।’

Share this post

PinIt
scroll to top