ব্যান্ড ‘আরবোভাইরাস’ নিয়ে জটিলতা কাটছে না সহসাই। একদিকে ঢাকায় সুহার্তো শেরিফ (প্রতিষ্ঠাতা সদস্য) নতুন সতীর্থ নিয়ে ব্যান্ড পরিচালনা করছেন, অন্যদিকে বিদেশে এক হয়ে গান-কনসার্ট করছেন ব্যান্ডটির আদি চার সদস্য সূফী, রঞ্জন, আদনান ও নাফিস। দুই পক্ষের কথা শুনেছেন কামরুল ইসলাম।
রক ব্যান্ড হিসেবে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে ‘আরবোভাইরাস’-এর।
দুই দশকের বেশি সময়ের পথচলায় রেকর্ডকৃত গান কিংবা কনসার্ট—নিজস্ব ঢঙে মাতিয়ে রেখেছে ব্যান্ডটি। তবে ব্যান্ড সংস্কৃতির চিরচেনা ভাঙনের ঝড় এড়াতে পারেনি ‘আরবোভাইরাস’। ২০১৮ সালে ব্যান্ডটির গীতিকার ও গিটারিস্ট আসিফ আসগর রঞ্জন চলে যান যুক্তরাজ্যে। করোনা মহামারির পর অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান আরেক সদস্য আহমেদ আদনান আলম (বেজিস্ট)।
সর্বশেষ ২০২২ সালে বিদেশে পাড়ি জমান ড্রামার নাফিস আল আমিন ও ব্যান্ডটির প্রাণভোমরা ভোকাল সূফী ম্যাভরিক (আশরাফুজ্জামান ইউসূফী)।রঞ্জনের দেশত্যাগের পর থেকে সূফী ও অন্যরা মিলে ব্যান্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালীন আরেক সদস্য সুহার্তো শেরিফের অসহযোগিতার কারণে স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে জানান সূফী। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সূফী কানাডায় চলে যাওয়ার পর নতুন সদস্য নিয়ে ‘আরবোভাইরাস’ পরিচালনা শুরু করেন সুহার্তো। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব পৌঁছে চরমে।
গত বছরের জুনে সুহার্তোকে আইনি নোটিশ পর্যন্ত দিয়েছিলেন সূফী, রঞ্জন, আদনান ও নাফিস।বিষয়টির স্পষ্ট কোনো সুরাহা হয়নি এখনো। তিন দিন আগে কানাডা থেকে সূফী জানালেন, সেখানেই পুনর্মিলন হতে যাচ্ছে তাঁদের। সুহার্তো নয়, বাকি চার সদস্যই উঠছেন মঞ্চে। ১৭ আগস্ট টরন্টোতে ‘বাংলাদেশ রক ফেস্ট’-এ গাইবেন তাঁরা।
যেখানে আরো পারফরম করবে ঢাকার ‘শূন্য’, ‘স্টোইক ব্লিস’ ও ‘আইরনক্লেফ’।
সূফী বলেন, “আরবোভাইরাস বলতে আমরা চারজনই ছিলাম এবং আছি। সুহার্তো প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য বটে, তবে প্রথম অ্যালবামের পর থেকে তার কোনো ভূমিকা ছিল না। অথচ এখন দেশে থাকার সুবাদে ব্যান্ডের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল সব দখল করে রেখেছে সে। শুধু তাই নয়, আমাদের বিভিন্ন গান পর্যন্ত সরিয়ে ফেলেছে। এসব তো মানা যায় না। আমরা চারজন (সূফী, রঞ্জন, আদনান ও নাফিস) ভিন্ন দেশে থাকলেও এখন থেকে এক হয়েই গান করব। এই যাত্রার শুরুটা হচ্ছে টরন্টো কনসার্ট দিয়ে। এরপর ১৮ আগস্ট কানাডার উইন্ডসরে কনসার্ট করব আমরা।”
সূফী আরো বলেন, আদি সদস্যরা এক হয়ে নতুন একটি অ্যালবামের কাজও গুছিয়ে নিয়েছে। ‘নিখোঁজ সংবাদ’ শিরোনামের সেই অ্যালবামের প্রথম গান প্রকাশ করা হবে কনসার্ট১৭ আগস্টের কনসার্টে। সূফী বলেন, ‘গান প্রকাশ ছাড়াও ভক্তদের জন্য বিশেষ চমক থাকছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আমাদের পুরনো সদস্য ড্রামার তানিম ও বেজিস্ট জিশান যোগ দিচ্ছে কানাডা ট্যুরে। তাই এই শোকে বলা যেতে পারে আরবোভাইরাসের পুনর্মিলনী।’
এদিকে ‘আরবোভাইরাস’ নামে দেশে নিয়মিত শো করছেন সুহার্তো শেরিফ, প্রকাশ করছেন গানও। ২৮ জুন প্রকাশ করেছেন ‘হয়তো’ শিরোনামের একটি গান। এই জটিলতার সমাধান হবে কিভাবে? সূফী বলেন, “দেখুন দেশে না থাকলে মানুষের জায়গা-জমি পর্যন্ত দখল হয়ে যায়! ব্যান্ডের ট্রেড লাইসেন্স আমার নামে করা, অংশীদারি কম্পানি আইনে নিবন্ধন করা আছে ‘মেসার্স আরবোভাইরাস’ নামে। সুতরাং এটা তো তার ব্যক্তিগত দল না। জানুয়ারিতে আমরা দেশে ফিরব। তখন এটা নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেব।”
বিষয়টি নিয়ে একেবারে বিপরীত বক্তব্য পাওয়া গেল সুহার্তো শেরিফের কাছ থেকে। তিনি বলেন, “আমি ‘আরবোভাইরাস’-এর প্রতিষ্ঠাতা। আমার ব্যান্ডে এ পর্যন্ত অনেকেই পারফরম করেছে। এর মধ্য থেকে দুই-তিনজন যদি বিদেশে গিয়ে গান-কনসার্ট করে, আমি কী করতে পারি? তারা এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। তা ছাড়া আমি এটা নিয়ে কথাই বলতে চাই না। কারণ এতে দিনশেষে ব্যান্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। সূফী ম্যাভরিক ২০২২ সালে ঘোষণা দিয়ে ব্যান্ড ছেড়েছে। এখন সে যদি নিজেকে ব্যান্ডের সদস্য দাবি করে, তাহলে তো হবে না। আর ট্রেড লাইসেন্সের কথা বলছে, এগুলো অল্প কিছু টাকা দিয়ে যে কেউ করতে পারে।”
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে সুহার্তো শেরিফ, আসিফ আজগর রঞ্জন এবং হিমেলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘আরবোভাইরাস’। পরের বছর এতে ভোকাল হিসেবে যোগ দেন সূফী। ২০০৬ সালে প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘৬৪ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড’ প্রকাশিত হয় এবং এর মাধ্যমে শ্রোতামহলে জায়গা করে নেয় ব্যান্ডটি। পরে আরো কিছু অ্যালবাম ও সিঙ্গেলস প্রকাশ করেছে তারা।