বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করেও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাঁরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বেশির ভাগ কর্মী জমি বিক্রি করে, স্বজন বা পরিচিত কারো কাছ থেকে ধার করে এসব টাকা জোগাড় করেন। অনেকে ঋণ করেছেন চড়া সুদে। এখন এসব ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তাঁরা গাঢাকা দিয়ে আছেন।
গত ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে ও বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েও প্রায় ১৬ হাজারের বেশি কর্মী যেতে পারেননি মালয়েশিয়ায়। তাঁরা যে অর্থ দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সিকে দিয়েছেন, সে টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না।
কর্মীরা বলছেন, ধারের টাকা জোগাড় করতে না পারলে আদৌ তাঁদের বাড়ি ফেরা হবে না।
এদিকে মালয়েশিয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গত ২৩ জুন মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এরই মধ্যে সপ্তাহখানেক পার হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে কী আছে এবং মালয়েশিয়াকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা জানাতে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত রবিবার হাইকোর্ট থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
সে অনুযায়ী প্রতিবেদন প্রকাশের সময় জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ প্রতিবেদন নিয়ে কাজ চলছে। সেখান থেকে উত্তর এলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে। নির্দেশ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
সেই সময় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে।’ভুক্তভোগীদের ভাষ্য : পটুয়াখালী সদর উপজেলার বাসিন্দা মো. রাব্বি হোসেন মালয়েশিয়া যেতে নোমান নামের এলাকার এক দালালকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দেন। শুধু রাব্বি নন, একই এলাকার মো. মাসুদ বয়াতি, ইকবাল ও আসাদুল্লাহ নামের আরো তিনজন একই পরিমাণ অর্থ নোমানকে দেন। কিন্তু তাঁরা কেউ মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। এখন অর্থ ফেরত না পেয়ে পালিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
এ ঘটনা তুলে ধরে মো. রাব্বি হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এখন ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জীবন পার করছি। সুদে টাকা ধার নিয়েছি। বাড়ি গেলেই সুদের টাকা দিতে হবে। কিন্তু কিভাবে দেব? এখন পালিয়ে দিন কাটাচ্ছি।’
আরেক কর্মী মো. মাসুদ বয়াতি কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম, দালাল আমাদের বাধা দিয়েছে। শুধু বলে অপেক্ষা করতে। তবে আমরা গোপনে মন্ত্রণালয় ও বিএমইটিতে আমাদের কাগজপত্র দিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছি। বিএমইটি থেকে বলা হচ্ছে, ‘বাড়ি যান, একটা ব্যবস্থা হবে।’ কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কিছু বলেনি।”
হাইকোর্টের নির্দেশ : সব প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত ছাড়পত্র নিয়েও কয়েক হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে না পারার ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত রবিবার এসংক্রান্ত এক রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মৌখিক আদেশ দেন।