তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, লেবানন নিয়ে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান বাগাড়ম্বর এবং হামলার প্রস্তুতি এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তুরস্ককে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন করছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এরদোয়ান এ উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, যতক্ষণ না প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসনের অধীনে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হবে, ততক্ষণ তুরস্কসহ আমাদের অঞ্চলের কোনো রাষ্ট্রই নিরাপদ বোধ করতে পারে না।
অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই পক্ষই সীমান্তে স্বল্প মাত্রায় পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তেজনা বড় ধরনের যুদ্ধের উদ্বেগ তৈরি করেছে।
লেবানের গোষ্ঠীটি বলছে, গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলে ড্রোন, মিসাইল হামলা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তাদের পুরো মাত্রায় যুদ্ধের ইচ্ছে নেই। গাজায় ইসরায়েলের হত্যাকাণ্ড বন্ধে চাপ প্রয়োগ করতেই কেবল সীমান্তে অস্থির রেখেছে তারা।
গত বছর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলা এবং নাগরিকদের অপহরণের জেরে গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেন নেতানিয়াহু। এতে প্রায় ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়ে গেছে প্রায় সব স্থাপনা। বাদ যায়নি হাসপাতাল, মানবিক ত্রাণসহায়তার স্টেশনও।
গাজায় হামলা বন্ধে এরদোয়ান শুরু থেকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন ধরনের মানবিক পদক্ষেপও নিয়েছে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করছে না ইসরায়েল। এরই মধ্যে লেবাননে হামলার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় দেশটিতে উদ্বেগ বাড়ছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে এরদোয়ান বলেন, আমরা সামষ্টিক পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাসী। এ উদ্দেশ্য সাধনে যে কারও মুখোমুখি হতে দ্বিধা করব না। এ ছাড়া তুর্কিরা কখনও তার বন্ধুদের পরিত্যাগ করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সিরিয়ায় ‘রক্তপিপাসু গোষ্ঠী’ তাদের বন্দুক তাক করে থাকবে ততক্ষণ আমরা আমাদের দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর থাকব।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় হামলা শুরুর পর যে শক্তিগুলো সরাসরি গাজার পক্ষে দাঁড়িয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হিজবুল্লাহ। লেবাননের ইসলামী গোষ্ঠীটিকে বিশ্বের রাষ্ট্রবিহীন সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং সুশৃঙ্খল সামরিক বাহিনী হিসেবে গণ্য করা হয়। গোষ্ঠীটি বারবারই ইসরায়েলের অভ্যন্তরে তাদের হামলার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে আসছে।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে উত্তেজনা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের অনবরত বোমা হামলার প্রতিবাদে তেল আবিব, হাইফাসহ ইহুদিবাদীদের অন্যান্য শহর লক্ষ্যে ডজন ডজন রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে লেবানন। এসব হামলায় যোগ দিচ্ছে অন্যান্য ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোও। বেছে বেছে তারা টার্গেট করছে ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনা, সেনাদের অবস্থান, সমুদ্রবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকা।
হিজবুল্লাহর প্রতিরোধ হামলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে। বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কায় পালিয়ে যেতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে লেবাননে সর্বাত্মক হামলা শুরু করার হুঙ্কার দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এরই প্রেক্ষিতে নতুন করে যুদ্ধ শুরু বন্ধে তৎপর হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পক্ষ। তুরস্কও যে এ যুদ্ধ চায় না তা স্পষ্ট করলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।