শিগগিরই আসছে মুদ্রানীতি, ফের বাড়ছে নীতি সুদহার

1719977346-6f4054eefa37d9e39f33f06fe0d73c59.jpg

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে গত বছর থেকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নীতি সুদহার আরো বাড়ানোর পরামর্শ। আগের মুদ্রানীতির সময় গভর্নরের ঘোষণা ও আইএমএফের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে ধারণা করা হচ্ছে, এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ঘোষণা হতে যাওয়া মুদ্রানীতিতে আবারও বাড়ানো হচ্ছে নীতি সুদহার।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত—মোটাদাগে এই সবই হচ্ছে এখন দেশের আর্থিক খাতে প্রধান সমস্যা।

এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিবিএসের তথ্য মতে, এখন মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছিল। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে দেখা যায়নি।

সর্বশেষ গত মে মাসে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯.৮৯ শতাংশ ছিল।বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগের মুদ্রানীতিগুলোর মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও সংকুলানমুখী ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে সুদহার আরো বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও।

এ ছাড়া ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হতে পারে। ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল নির্দেশিত ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তবে এতে লক্ষ্য অনুযায়ী সুফল পাওয়া যায়নি। এ জন্য আসন্ন মুদ্রানীতিতে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি আগের মতোই রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, আগামী ৭ জুলাই থেকে মুদ্রানীতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক হবে। এরপর ১১ তারিখে মুদ্রানীতিসংক্রান্ত কমিটির চূড়ান্ত বৈঠক হবে।

সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কম। ব্যাংকঋণের সুদহার এরই মধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর পরও নীতি সুদের হার বাড়িয়ে টাকাকে আরো দামি করে তোলা হতে পারে। এতে ঋণের সুদের হার আরো বাড়বে।

কয়েক বছর ধরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। আর অর্থনীতির ভিতকে ধারাবাহিকভাবে দুর্বল করছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্রমাগত ক্ষয়। এতে ডলার সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি আইএমএফ ও অন্যান্য সংস্থা থেকে ধারদেনা করে রিজার্ভ কিছুটা বাড়িয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বড়দের জন্য পুঁজিবাজার আছে, তারা তহবিল সংগ্রহের জন্য সেখানে যাক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পণ্যের উত্পাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজারব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা না থাকলে সেটি প্রণয়ন কিংবা ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ নেই।

গত ১৭ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে ৭.৫ শতাংশে নেমে আসবে, বর্তমানে যা প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। এরপর ধীরে ধীরে তা ৬ শতাংশের ঘরে আসবে। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে।

নীতি সুদহার

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দেওয়ার কথা বলে জানুয়ারি মাসের মুদ্রানীতিতেও নীতি সুদহার বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে তা ৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এরপর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরো দুইবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে সংস্থাটি। বর্তমান নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে এই হার ৯ শতাংশে উন্নীত করা হতে পারে।

নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য এ বছরের জানুয়ারি মাসে ‘সতর্ক ও সংকুলানমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। এর প্রধান লক্ষ্য টাকাকে আরো দামি করে তোলা। অর্থাত্ সুদহার বাড়িয়ে অর্থের প্রবাহে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ। এ জন্য বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও কমানো হয়। গেল জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৯০ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭.৮ শতাংশ।

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ

সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ব্যাংকগুলো থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রির মাধ্যমে ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৯ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। তথ্য বলছে, সরকার আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি ঋণ নিয়েছিল। ফলে চলতি অর্থবছরের এ সময়ে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ।

Share this post

PinIt
scroll to top