হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপির অপেক্ষায় রাষ্ট্রপক্ষ

1719748923-9e8a01bfb2c96c61eda1158eb7452e8d.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

আট বছর আগে রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার দায়ে সাত জঙ্গির আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা, তা এখনও জানে না রাষ্ট্রপক্ষ। আটমাস আগে হাইকোর্ট রায় দিলেও সেই রায়ের অনুলিপি এখনো রাষ্ট্রপক্ষ পায়নি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন।

রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে হাইকোর্ট আসামিদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাই তাদের মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে।

বের হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং হোইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপিল বিভাগে বিবিধ আবেদন করার প্রয়োজন নেই।’ 

এক প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায়ের অনুলিপি পেলে বুঝতে পারবো কী যুক্তিতে বা কোন কোন যুক্তিতে মৃত্যুদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়টি পেলে পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখাটাই আমি মনে করি ওদের জন্য যথার্থ ছিল। কারণ ওদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ ওরা কতগুলো বিদেশি নিরীহ মানুষকে নৃসংশভাবে হত্যা করেছে, যারা আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ছিল।

ধর্মের নামে, উগ্রবাদীতার নামে তাদের হত্যা করেছে। এই দণ্ডিতরাই পেছনে থেকে মদদ দিয়েছে, পরিকল্পনা করেছে। তাই ওদের প্রতি বিন্দুমাত্র অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।” 

যদি আপিল করা হয়, সেই আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করবে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায়টা আগে বের হোক। আমরা দেখে নেই।

২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলার ঘটনাটি ঘটে। আট বছর আগের এ হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল নামের পাঁচ তরুণ জঙ্গি রোজার ঈদের এক সপ্তাহ আগে পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়েছিল হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। জবাই করে, গুলি চালিয়ে তারা ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে।

হামলা ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ হারান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে জঙ্গিদের হত্যা করা হয়। ওই হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় রায় হয় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। প্রাণদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। এছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরও দুটি ধারায় তাদের কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড।

বিচারিক আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে, সে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এজন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের পর মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে পাঠাতে হয়; যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত।

২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট এ মামলার নথি আসে হাইকোর্টে। পরে দণ্ডিতরাও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল ও জেল আপিল করেন। গত বছর শুরুর দিকে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল-জেল আপিলে শুনানি শুরু হয়। শেষ হয় ১১ অক্টোবর। পরে ৩০ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে সাত জঙ্গিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।

দণ্ডিতরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ার ব্যখ্যায় হাইকোর্ট রায়ে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও এই সাত আপিলকারী ষড়যন্ত্র ও ঘটনায় সহায়তা করেছেন, যা সন্দোতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ষড়যন্ত্র ও ঘটনায় (জঙ্গি হামলা) সহায়তার কারণে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ৬ এর ১ উপধারা (ক) (আ) দফায় বর্ণিত অপরাধে তারা দোষী। কিন্তু সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট ধারা-উপধারার সঠিক উপলব্ধি না করে আপিলকারীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, যা সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নয়। যে কারণে উক্ত (বিচারিক আদালতের) রায়টি হস্তক্ষেপযোগ্য।’

উচ্চ আদালত রায়ে বলেন, ‘দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাছাড়া এই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডটি জনসাধরণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে।’

Share this post

PinIt
scroll to top