যশোর জেলা আ’লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ

jessore-29062024-01.jpg

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের (মিলন) বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার এবং তাঁর বাড়িতে নগদ ১০ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু ও ধান, গম লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি।

শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান এসব অভিযোগ করেন। তবে আসাদুজ্জামানের বাড়িঘর ভাঙচুর ও তাঁর বাড়িতে লুটপাট চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলামই না।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে যশোর সদর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের আসাদুজ্জামানের ছেলে আরমান হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। এই সময় তাঁরা এক্সকাভেটর যন্ত্র দিয়ে তাঁদের আটটি বসতঘর, দু’টি রান্নাঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের বাড়িতে রাখা নগদ ১০ লাখ টাকা, মা, ভাবি ও স্ত্রীর ৩০ ভরি সোনার গয়না, ৩টি গরু, ৬টি ছাগল, প্রায় ৬০ টন ধান ও গম সাত থেকে আটটি ট্রাক্টরের ট্রলিতে নিয়ে গেছেন।’

আসাদুজ্জামান ছোট ছেলে যশোর জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফরুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে মামলা করার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তিন দিনেও অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি পুলিশ। আমরা আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘১৯৯২ সালে ব্যাংকের নিলামের মাধ্যমে জমিটি কিনে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছি। এই জায়গার সাবেক মালিক নুরুল ইসলাম। তিনি এই জায়গা শিল্প ব্যাংকে মর্টগেজ দিয়েছিলেন। ওই ব্যাংক এই জায়গা নিলামে বিক্রি করলে আমি ক্রয় করি। গত বছর নুরুল ইসলামের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম এই জমি দখলের জন্য তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আসেন। নুরুল ইসলাম নাকি শহিদুল ইসলামের বেয়াই হন। সেই জেরে গত বৃহস্পতিবার আবারও তাঁরা আমার বাড়িতে হানা দেন।’

সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমার বাবা শহীদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আমরা শহিদ পরিবারের সন্তান। আমাদের ওপর এই হামলার বিচার চাই।’
এর আগে শুক্রবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম, এটার কেউ প্রমাণ দিতে পারলে যে শাস্তি দিবেন মাথা পেতে নেবো। আমার ছেলেও চার দিন হলো ঢাকায় রয়েছে, তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম না। সন্ধ্যায় ঘটনাটি শুনেছি। আমার বেয়াই নুরুল ইসলাম ওই জমির মালিক। ২৭ বছর ধরে আসাদুজ্জামান দখল করে রেখেছে। জমির মালিক নুরুল ইসলাম জমি উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন। তাঁরা ভাঙচুর কিংবা লুটপাট করেননি।’

ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘অনেক আগে আমি আমার ২ একর ৯৭ শতক জমি বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিলুপ্ত শিল্প ব্যাংক) থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। ওই জমি নিলামে ক্রয় করেন আসাদুজ্জামান। কিন্তু তিনি ওই জমি ছাড়াও আমার ও আমার স্বজন নূর মোহাম্মদের ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। ওই জমিতে আমার নির্মিত বাড়িটিও তাঁরা অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন। আমি আমার বাড়ি উদ্ধারে আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাকের দাপ্তরিক মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কেউ সাড়া দেননি।
তবে কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তারা কাউকেই পায়নি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগের তদন্ত চলছে।’

Share this post

PinIt
scroll to top