বন্যায় বেড়েছে নৌকার কদর, জমজমাট শতবর্ষী বৈরাগীর হাট

image_99845_1719631968.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চারদিকের খাল বিলে এখন থইথই পানি। তাই তো নৌকার কদর বেড়েছে। এ কারণে জমে উঠেছে উপজেলার একমাত্র বৈরাগী বাজারের শতবর্ষী নৌকার হাট। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার এই নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

সরেজমিন নৌকার হাটে দেখা যায়, উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের বৈরাগী বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাকুন্দা নদীর চরে সারি সারি নৌকা সাজিয়ে বসে আছেন কারিগররা। দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে দরদাম ও দেখেশুনে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যান পছন্দের নৌকা। পাশাপাশি নৌকা বাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রকমের আকর্ষণীয় বৈঠাও সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের মতে, নৌকার বাজার হিসেবে বৈরাগী বাজার সিলেট অঞ্চলের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। এ হাটটি প্রায় শত বছর কিংবা তারও অধিক বছরের পুরোনো হবে। তবে কেউই এর সঠিক ইতিহাস বলতে পারেননি

বৈরাগী বাজারে কথা হয় নৌকা বিক্রেতা উপজেলার মাখর গাওয়ের সুদাংশু দাশ, রফিজ মিয়া, রায়পুর গ্রামের নিপেন্দ্র রায়ের সঙ্গে।

তারা জানান, জারুল, কড়ই, রেন্টি, আম, জাম, চামবুল, শিমুল ও কৃষ্ণচূড়াসহ প্রায় সব কাঠ দিয়েই নৌকা তৈরি করা হয়ে থাকে। কাঠের ব্যবহার ও আকারের ওপর প্রতিটি নৌকার দাম পড়ে ৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। জারুলের তৈরি নৌকা সর্বোচ্চ ও শিমুলের তৈরি নৌকা সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে, ৫০ হাজার টাকা দরের নৌকাও উঠে এই বাজারে।

সদর উপজেলা থেকে আসা ক্রেতা আকবর আলী জানান, যাতায়াত, গৃহস্থালি, গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য তিনি নৌকা কিনতে এসেছেন।

ওসমানীনগর উপজেলার প্রবাসী আব্দুল হেকিম বলেন, চারদিকে পানি, তাই একটি নৌকা কিনতে এসেছি।

বাজারের ইজারার দায়িত্বে থাকা খলিল মিয়া জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নৌকার চাহিদা বাড়ে। তবে, গত সপ্তাহে হঠাৎ করে বিশ্বনাথে বন্যা হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ। গত বৃহস্পতিবারে প্রায় আড়াইশ’র অধিক নৌকা বিক্রি হয়েছে।

এদিকে, বন্যার পর পুরোনো নৌকা মেরামত করাচ্ছেন অনেকে। দেখা যায়, বৈরাগী বাজারের মাকুন্দা নদীর পশ্চিম পাড়ে জমশেরপুর গ্রামের জিয়া উদ্দিনের নৌকা মেরামত করছেন একই গ্রামের নৌকার কারিগর বাদ উল্লাহ।

জিয়া উদ্দিন জানান, নৌকা ঠিক করবেন করবেন বলে বন্যা চলে আসলো। বন্যার পর এখন নৌকা মেরামত করাচ্ছেন।

পাশাপাশি লামারচক গ্রামের নিজাম উদ্দিনের নৌকা মেরামত করছেন রায়পুরের পরিমল দাশ।

পরিমল দাশ জানান, ১২ হাতের একটি নৌকা তৈরি করতে দুজন কারিগরের ২-৩ দিন সময় লাগে। তিনি ৩০ বছর ধরে নৌকা তৈরি করা কাজ করছেন। বর্ষা এলে নৌকা তৈরি করেন। বছরের বাকি দিনগুলো তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালান।

উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, বৈরাগী বাজারের নৌকার হাট অনেক পুরোনো। এটি উপজেলার একটি ঐতিহ্য। এই বাজারকে ধরে রাখতে ও উন্নয়নে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top