দেশের তথ্য ডেস্কঃ
দুবাইয়ের কথা চিন্তা করলে সবার আগে যে ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেটি হলো বুর্জ খলিফা। অনন্য ডিজাইন এবং উচ্চতার কারণে যে কারও মন কেড়ে নিতে সক্ষম বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই ভবন।
তাই যারা একবার দেখেছে, চোখে ফেরাতে পারেনি। মরুর বুকে এমন একটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ এবং সব প্রতিকূলতার মধ্যেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বুর্জ খলিজা, মানুষের দক্ষতা ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনন্য নজির।
মানব ইতিহাসে এর চেয়ে উঁচু আর কোনো ভবন এখনও নির্মিত হয়নি। অথচ মাত্র তিন সপ্তাহের ডিজাইনেই মরুভূমির বুক চিরে গড়ে তোলা হয়েছে বুর্জ খলিফাকে।
২০০০ দশকের শুরুর দিকে অ্যাড্রিয়ান স্মিথের দ্বারস্থ হয় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এমার প্রোপার্টিজ। সাংহাইয়ের ১ হাজার ৩৮০ ফুট উচ্চতার জিন মাও টাওয়ার, জিয়াংশুর ১ হাজার ৪৮০ ফুট উচ্চতার জাইফেং টাওয়ারের মতো সুউচ্চ ভবনের নকশা করেছেন স্মিথ।
ওয়াই-শেপের ট্রাইপারটাইট ফ্লোর জিওম্যাট্রি অনুসরণ করে বুর্জ খলিফার নকশা করা হয়েছে। প্রায় একই ধরনের নকশায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলে স্যামসাং টাওয়ার প্যালেস থ্রি-র পেছনের কারিগরও স্মিথ। ৯৩ তলা হওয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত এই ভবনটি ৭৩ তলা নির্মাণ করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে বুর্জ খলিফার নকশা তৈরি করেন স্মিথ। শেষ পর্যন্ত অনন্য এক নকশায় তৈরি হয় বুর্জ খলিফা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র দুবাইয়ে গড়ে উঠেছে বুর্জ খলিফা। যদিও বুর্জ খলিফা ঘিরে বর্তমান দুবাই সমৃদ্ধ হয়েছে। এখন বুর্জ খলিফাকে ঘিরে রয়েছে অফিস, দোকান, রেস্টুরেন্ট দুবাই মল। আবার বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন ডিজাইনার রিটেইলারও বুর্জ খলিফার আশপাশে ব্যবসা খুলেছে। যখন বুর্জ খলিফা তৈরি করা হয়, তখন আশপাশে তেমন কিছুই ছিল না। অথচ আজ দুবাই এক আলো ঝলমলে নগরী হয়ে উঠেছে।
তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর তাই বিশ্বমানের একটি গন্তব্য তৈরি করতে চেয়েছিলেন শেখ মোহাম্মদ। এ জন্য দুবাইকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কয়েক দফা বুর্জ খলিফার নকশা করা হয়। শুরুতে ২ হাজার ২৯৭ ফুট টাওয়ারের নকশা করা হয়। পরে কয়েক দফা মডিফাই করে প্রায় ৩ হাজার ১১৭ ফুট উচ্চতার নকশাও করা হয়।
বর্তমানে বুর্জ খলিফার উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট বা আধা মাইলের একটু বেশি। ২০০৯ সালে নির্মাণ শেষ হওয়ার পর তাইপে ১০১ ভবনকে উচ্চতায় পেছনে ফেলে বুর্জ খলিফা। ফ্রান্সের আইকনিক দুটি আইফেল টাওয়ার একত্রিত করলেও বুর্জ খলিফার উচ্চতাকে হারাতে পারবে না। অ্যান্টেনা এবং স্পায়ার বাদ দিলে বুর্জ খলিফার উচ্চতা ১ হাজার ৯১৯ ফুট, যা সাড়ে ছয়টি ফুটবল মাঠের সমান।
তবে রেকর্ডের বিবেচনায় এটা তো কেবল শুরু। বুর্জ খলিফার দখলে আরও অনেক রেকর্ড রয়েছে। এ যাবৎকালের সবচেয়ে উঁচু ভবনের রেকর্ডও বুর্জ খলিফার। এ ছাড়া সবচেয়ে উঁচু ফ্রিস্ট্যান্ডিং স্ট্রাকচার, সবচেয়ে বেশি তলাবিশিষ্ট ভবনের মতো কীর্তি বুর্জ খলিফা ছাড়া আর কারও নেই। সুউচ্চ এই ভবন নির্মাণে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। তবে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভবনের মুকুট পড়েছে সৌদি আরবের রাওয়াবি আবরাজ আল বাইত টাওয়ার। এই ভবনটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৫০০ কোটি ডলার।
এখানে অ্যাপার্টমেন্ট এবং স্টুডিও মিলিয়ে মোট বাসস্থানের সংখ্যা ৯০০। বুর্জ খলিফায় হোটেল, সুইমিং পুল, স্বাস্থ্যচর্চা কেন্দ্র, লাইব্রেরি রয়েছে। পৃথিবীর উচ্চতম আউটডোর অবজারভেশন ডেকও রয়েছে বুর্জ খলিফায়। এ ছাড়া বুর্জ খলিফায় রয়েছে পার্ক, ওয়াটার ফিচার, ক্লাব, নিজস্ব দোকান, বাজার, শপিংমল। এখানকার বাসিন্দাদের কিছু কিনতে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
মানুষ রেকর্ড গড়তে এবং ভাঙতে ভালোবাসে। তাই বুর্জ খলিফাকে টক্কর দিতে আরও একটি সুউচ্চ ভবনের নকশা করেছেন স্মিথ। সৌদি আরবের জেদ্দা টাওয়ার, যার উচ্চতা ৩ হাজার ২৮১ ফুট। বিশ্বের প্রথম ভবন হিসেবে এর উচ্চতা এক কিলোমিটার। ২০১৩ সালে ভবনটির নির্মাণ শুরু হলেও ২০১৮ সালে সেটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাই সহসাই বুর্জ খলিফার রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবে না।