শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকার পদক পেলেন পীরগাছার রেহেনা

image_99673_1719581579.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক পেয়েছেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পবিত্রঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. রেহেনা বেগম।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে তার হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গত ১৩ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে তার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হওয়ার খবরটি জানা যায়।

ওই পত্রের মাধ্যমে জানা যায়, পবিত্রঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। যার জন্য তাকে প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ এর শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি। এ দিন প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান, খেলাধুলা, সংগীত, বিদ্যালয় পরিচালনা, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও শিক্ষার্থী ১২৬ জনের হাতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক তুলে দেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষিকা মোছা. রেহেনা বেগম ১৯৮০ সালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সুখানপুকুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আজাহার আলী পেশায় একজন ঢেউটিন ব্যবসায়ী ছিলেন। চার ভাইবোনের মধ্যে রেহেনা বেগম সবার ছোট। তিনি ২০০৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে উদ্ভিদবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্বামী ও নয় বছরের এক ছেলেসন্তান রয়েছে।

প্রধান শিক্ষিকা মোছা. রেহেনা বেগম কালবেলাকে বলেন, পবিত্রঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ মাস হলো যোগদান করলেও আমার সফলতার বীজ বপন রংপুর পীরগাছার নগরজিৎপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটি পিছিয়ে পড়া বিদ্যালয়টি প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২২ উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ৬ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৪ জনই ট্যালেন্টপুল বৃত্তি লাভ করে যা শতকরা হিসেবে উপজেলা শ্রেষ্ঠ রেজাল্ট অর্জন করে। আমি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি কো-কারিকুলামের উপর গুরুত্ব আরোপ করি যা তাদের সার্বিক বিকাশে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করে।

তিনি আরও বলেন, আমি স্কুলের বাচ্চাদের নিজের সন্তানের মতো মনে করি। স্কুলের বাচ্চাদের ঝরে পড়া রোধ, পড়াশোনায় মনোযোগী করা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধকরণ, নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষাসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডে আমি নিজেকে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করেছিলাম। যার স্বীকৃতি স্বরূপ আমি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকার পদক পেয়েছি।

এ জন্য আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাকে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা ক্যাটাগরিতে প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ প্রদান করবার জন্য। আরও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার ১৮ বছর ৪ মাস কর্মজীবনে প্রাপ্ত কর্মকর্তা মহোদয়গণ, সহকর্মীগণ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, প্যারেন্টর্স টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন, সোশ্যাল অডিট কমিটি, স্লিপ প্রণয়ন টিম, বিদ্যালয় ক্যাচমেন্ট, এলাকার ক্যাচমেন্ট, এলাকার সুধীমণ্ডলী, অভিভাবকগণ, সম্মানিত এলাকাবাসী, আমার প্রিয় শিক্ষার্থী এবং আমার পরিবারের সদস্যগণের প্রতি। বিশেষ করে নগরজিৎপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্টাফ, অভিভাবক, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এ ছাড়া তিনি আরও বলেন, কখনো প্রত্যাশা ছিল না দেশ সেরা হবো। সবসময়ই মনে হতো কাজটা সততার সঙ্গে সবচেয়ে সুন্দর করে করি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন আমি সুস্থ থেকে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারি।

এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন তার কালবেলাকে বলেন, পবিত্রঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. রেহেনা বেগম জাতীয় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকার পদক পাওয়ায় আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আমরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার তার অসামান্য অর্জনে অত্যন্ত আনন্দিত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন কালবেলাকে বলেন, মোছা. রেহেনা বেগম জাতীয় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকার পদক পাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গর্বের। তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি পীরগাছাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পীরগাছার সকল শিক্ষকবৃন্দ আরও ভালো শিক্ষক হিসেবে নিজেদেরকে আবির্ভূত করবেন সেই প্রত্যাশা করছি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পদক নীতিমালায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কয়েকটি নতুন পদক সংযোজন করে মোট ১৮ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রদানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে নিজ সংস্কৃতির উন্নয়ন, আত্ম-উন্নয়ন, আত্ম-নির্ভরশীলতা অর্জন এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজ দেশের সংস্কৃতি উন্মোচন করা।

Share this post

PinIt
scroll to top