দেশের তথ্য ডেস্কঃ
সিলেটে ধীর গতিতে বন্যার উন্নতি হলেও আবারও বৃষ্টি হওয়ায় আতংক বিরাজ করছে এ এলাকার মানুষদের মাঝে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ আবাসস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন অনেক বানভাসী। জেলার বিভিন্ন গ্রাম ও নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন বাড়িতে ফিরলেও তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু নতুন করে আবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত সিলেটবাসী। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে। এরই মধ্যে বুধবার বিকেল ৬টা থেকে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে আবারও পানিবন্দি হওয়ার শঙ্কায় আছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষজন। সীমান্ত এলাকা কোম্পানীগঞ্জের মানুষজন আছেন বেশ ঝুঁকিতে।
কোম্পানীগঞ্জের টুকেরগাঁও গ্রামের সমাজসেবক আহসান হাবিব পলাশ জানান, ‘বন্যা পরিস্থিতির কারণে আমার পরিবারসহ আমাদের গ্রামের মানুষজন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে নাই। এ গ্রামের বাড়ি-ঘরে ২ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত পানি ছিল। তারপরও আমাদের গ্রামে কোন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে নাই। তবে মেম্বার সাহেবের ফেসবুকে দেখেছি আমাদের ওয়ার্ডের দুই গ্রামে ৩০ কেজি চিড়া বিতরণ করেছে। যা মানুষের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল’।
কোম্পানীগঞ্জের বউ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সালমান আহমদ বলেন, ‘আমাদের গ্রামে মানুষরা ৪-৫ দিন পানিবন্দি ছিলেন। অনেকের বাড়ি-ঘরে ৩-৪ ফুট পানি উঠায় বাড়ি ঘর ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়ি ঘরে আশ্রয় নিলেও কেউ আমাদের এলাকায় ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেন নাই’।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সিলেট জেলায় বন্যায় পানিবন্দি আছেন ৭ লাখ ৩৩ হাজার ২২০ জন মানুষ। সিলেট জেলার ৬৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৪২৩ জন। বানভাসী মানুষরা অভিযোগ করে জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। যারা পাচ্ছেন তারা বার বার পাচ্ছেন। বঞ্চিতরা হাহাকার করছে। বাড়ি বাড়ি ফিরে বাসস্থান ঠিক করবে নাকি খাবারের সন্ধান করবে-এই চিন্তায় দিনানিপাত করছে মানুষ।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় বন্যা আক্রান্ত মানুষ আছেন ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৫০ জন। জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১২ হাজার ৬৭৯ জন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকাল ৯টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্যানুযায়ী, কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর অন্যান্য পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, বুধবার সকাল ছয়টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৭ মিলিমিটার। সকাল ছয়টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২ মিলিমিটার।
অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৬ মিলিমিটার।
সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানি ও টানা বৃষ্টিপাতে বন্যাকবলিত হয়েছিল উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ। বানভাসি এসব মানুষের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে বন্যা কবলিত সকল মানুষদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে না পারলেও আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষদের মাঝে শুকনো খাবার ও জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক সরকার ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।
তবে বন্যাকবলিত মানুষদের অভিযোগ উলটো দিকে। তারা বলছেন, দুর্যোগময় সময়ে ত্রাণ সহায়তা দূরের কথা জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদেরই দেখা মেলেনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, কোম্পানীগঞ্জের ১৪৮টি গ্রামের মধ্যে ৪-৫টি গ্রাম ব্যতিত সকল গ্রামের প্লাবিত ছিল। প্রতিটি এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব না হলেও আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলার সকল গ্রামে কম বেশি ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছি।