দেশের তথ্য ডেস্কঃ
বাংলাদেশ সরকারের শ্রম খাত সংস্কার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আগামী চার বছরে দুই কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার অর্থায়নে ‘অ্যাডভান্সিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প পরিচালিত হবে। টিম ইউরোপ ইনিশিয়েটিভের আওতায় এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর লো মেরিডিয়ান হোটেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে।
অনুষ্ঠানো জানানো হয়, আগামী চার বছরে ২৪.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম খাত সংস্কার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে প্রকল্পটি।
আর এই সংস্কার সুশাসন, মৌলিক নীতি ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক অধিকারের সুরক্ষা এবং টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক উদ্যোগ ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার সমর্থন করি। বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারকে উৎসাহিত করতে এবং অর্থনীতির সব সেক্টরে পুরুষ ও নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. মাহবুব হোসেন আইএলও-র গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের কল্যাণ ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে এই সংস্কার উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করব।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুতিয়ানিন তার বক্তব্যে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণে কার্যকর ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন ‘মৌলিক নীতি ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশের অধিকার কেবল শ্রমিক ও নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বচ্ছ ও পরামর্শমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সুরক্ষিত হতে পারে।’টিম ইউরোপ থেকে উপস্থিত ছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এইচ ই চার্লস হোয়াইটলি; সুইডেনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে; ডেনমার্ক দূতাবাসের হেড অব কো-অপারেশন অ্যান্ডার্স কার্লসেন; এবং নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের হেড অফ কো-অপারেশন থিজ ওউডস্ট্রা। তারা নিজ নিজ বিবৃতিতে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের পর শ্রম অধিকার সুরক্ষা এবং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক বাজারের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রগুলোর ওপর জোর দেন।
এইচ ই চার্লস হোয়াইটলি বাংলাদেশ সরকারের চলমান উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা শ্রম সংস্কারের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানাই এবং আগামী কয়েক বছরে নতুন সাফল্যের গল্প তৈরিতে এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে আগ্রহী।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যক্তির উন্নয়ন, শ্রমিক সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশে একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গল্প রচিত হবে।’অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান হাইকমিশনার এইচ ই লিলি নিকোলস বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে একটি পরিপূরক প্রকল্পের মাধ্যমে অ্যাডভান্সিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভে কানাডা যোগ দেবে বলে তিনি ঘোষনা দেন। এটি চালু হলে শ্রম খাতের সংস্কার আরও ত্বরান্বিত হবে এবং তৈরি পোশাক খাতে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম নামের পাইলট প্রকল্পে অতিরিক্ত সহায়তা প্রদান করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল অংশীদার শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের সংগঠন প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই)-এর সদস্য সচিব চৌধুরী আশিকুল আলম এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি আরদাশির কবির, শ্রম সংস্কার প্রক্রিয়ায় জড়িত সকল ত্রিপক্ষীয় অংশীদারদের মধ্যে অব্যাহত সামাজিক সংলাপের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রকল্পে তাদের সমর্থন ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
‘অ্যাডভান্সিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক ইন বাংলাদেশ সম্পর্কে- ‘অ্যাডভান্সিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পটি আইএলও, বাংলাদেশ সরকার এবং শ্রমিক ও নিয়োগকর্তা সংগঠনগুলোর একটি ব্যাপক ও সমন্বিত প্রচেষ্টা। শ্রম খাতের সংস্কার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ প্রচার করতে টিম ইউরোপ অর্থায়িত চার বছরের একটি উদ্যোগ। এই প্রকল্পের লক্ষ্য শ্রমিকদের অধিকার বাড়ানো, কর্মক্ষেত্রে মৌলিক নীতি ও অধিকার প্রচার করা, নিরাপদ কাজের পরিবেশ গড়ে তোলা এবং এই অধিকারগুলি রক্ষা করার মাধ্যমে টেকসই ব্যবসায়িক অনুশীলন নিশ্চিত করতে সরকার, শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের সংগঠনগুলোকে সহায়তা করা।