রজতরেখায় স্বেচ্ছাশ্রমে খনন শুরু

1719469232-b3367ba06eea6de1cbfc4f00a7d95a07.webp

দেশের তথ্য ডেস্কঃ

১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রজতরেখা নদীর উৎসমুখ খুলে দেবার পর এবার নদীর জীবন ফিরিয়ে আনতে স্বেচ্ছাশ্রমে খনন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে টঙ্গীবাড়ির দিঘিরপাড় বাজার পয়েন্ট থেকে এই খননকাজের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। এতে অংশ নেন মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক। এরই মধ্যে দুই উপজেলার ভূমি কর্মকর্তাদের  উপস্থিতিতে নদীটির সীমানা চিহ্নিত করে লাল পতাকা স্থাপন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নদীটিতে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, রোভার স্কাউটস, স্কাউটস, বিএনসিসি ও যুব রেড ক্রিসেন্টসসহ বিভিন্ন সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ওড়া-কোদাল নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কাটছেন।জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন বলেন, রজতরেখা মুন্সীগঞ্জের অন্যতম এক  নদী। বেশ কয়েক বছর ধরে নদীটিতে ময়লা আবর্জনা ফেলায় প্রায় মৃত হয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়টি নজরে এনেছি।

আমরা আজ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছি। প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবী এখানে কাজ করছেন। আমাদের সার্বিক কাজে সহযোগিতা করছেন  টঙ্গীবাড়ি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এডিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। আমরা আশা করছি নদীটি তার প্রাণ ফিরে পাবে।
যে পর্যন্ত নদীটি তার প্রাণ ফিরে না পাবে এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এ কাজ বিরতীহীন চলবে।তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী নদিটিতে পানি প্রবাহ চালু করে জীবন ফিরিয়ে আনতে যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে। নদীর রক্ষার কার্যকরী তৎপরতায় চারিদিকে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক প্রবীণরা দুই হাত তুলে দোয়া করছেন। রজতরেখার মুখে মুন্সীগঞ্জের দিঘিরপাড় বাজার সংলগ্ন শিলইয়ের পূর্বরাখি গ্রামে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বন্ধ করায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে নদীটি।

একদা খরস্রোতা নদীটির দুই তীর থেকে দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। নদীটি ছিল প্রায় ৪৮০ ফুট প্রশস্ত। আর এখন কোনো কোনো স্থানে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। দখলদাররা পদ্মার সাথে সংযুক্তির পথে বাঁধ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, এর বুকে স্থাপন করা হয় দিঘিরপাড় বাজারের একটি বড় অংশ। বাকি অংশটি পরিণত করা হয়েছিল বাজারের ময়লার ভাগাড়ে। নদীর এই করুণ অবস্থায় নৌযোগাযোগ বন্ধ ছাড়াও দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির আলুসহ অন্যান্য ফসলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জমির উর্বরতা হ্রাস, পানি নামতে দেরি হওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। আর বৃষ্টিতে জমিগুলোতে জলাবদ্ধতায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতো। এসব কারণে আলু উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ জেলাটিতে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। পদ্মা থেকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত প্রবাহিত এই নদী আলদি-মাকহাটি এলাকায় কাজলরেখা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। আর এই কাজলরেখাকে বলা হয রজতরেখার বোন। দুই নদীর জননী বলা হয় পদ্মা নদীকে। দুই উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বুক চিরে প্রবাহিত নদীটি ছিল এ অঞ্চলের প্রাণ।গত রবিবার ২৩ জুন ‘দখল-দুষণে বিপন্ন রজতরেখা’ শিরোনামে দৈনিক কালের কণ্ঠে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাতি হলে তা মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর রিপনের নজরে আসে। গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে  উৎসমুখের বাঁধ অপসারণসহ নদীটির জীবন ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন তিনি। এরপর মঙ্গলবার সকালেই উৎসমুখের অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল কাটা শুরু করেন  বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

Share this post

PinIt
scroll to top