দেশের তথ্য ডেস্ক-
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকারি অফিস-আদালতের কর্মঘণ্টা কমানো হয়েছিল প্রায় দেড় বছর আগে। এখন আবার পুরনো সূচিতে (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত) ফিরছে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিসসূচি। ঈদুল আজহার পর প্রথম কর্মদিবস থেকে এই অফিসসূচি কার্যকর করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
বর্তমানে সরকারি অফিসসূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এখনই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এই গরমে কর্মঘণ্টা বৃদ্ধিতে অফিসের এসি, ফ্যান ও লাইটগুলো আরো এক ঘণ্টা বেশি চলবে। ফলে আগের তুলনায় বিদ্যুতের ওপর চাপ বাড়বে। বর্তমানে সারা দেশে দৈনিক বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রায় এক হাজার মেগাওয়াটের মতো।
এর প্রায় পুরোটাই পূরণ করা হচ্ছে ঢাকার বাইরের জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং দিয়ে। অনেক এলাকায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এমতাবস্থায় কর্মঘণ্টা বাড়ানোর ফলে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এত দিন পিক আওয়ারের আগেই অফিসের কাজ শেষ হতো, নতুন অফিসসূচিতে বিদ্যুতের পিক আওয়ার ছুঁয়ে যাবে।
ফলে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। আশা করছি, কর্মঘণ্টা এক ঘণ্টা বাড়ার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’
পিক আওয়ার হচ্ছে সেই সময়, যখন বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বাংলাদেশে এখন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুতের পিক আওয়ার ধরা হয়। বাকি সময়টা অফ পিক আওয়ার।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের পর অফিস সময়সূচি ৫টা পর্যন্ত নির্ধারণ করায় পিক আওয়ার আরো এগিয়ে আসবে। আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি, যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেমন পরিবর্তন আসবে না।’
বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) রেজাউল করিম বলেন, ‘অফিসের সময়সূচি বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্ধারিত থাকলেও বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি অফিস ৫টা পর্যন্ত চলছে। তাই নতুন অফিস সময়সূচির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে তেমন পরিবর্তন হবে না। বরং কর্মঘণ্টা বাড়ায় দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। এই সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেল ৩টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৬৯৫ মেগাওয়াট, তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৬৩৭ মেগাওয়াট। এ সময় লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ৫৫ মেগাওয়াট। যদিও বাস্তবে বিদ্যুতের চাহিদা ও লোডশেডিং পিজিসিবির তথ্যের চেয়ে আরো অন্তত এক হাজার মেগাওয়াট বেশি বলে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে থাকা দুটি ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত ২৭ মে থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সামিটের টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলএনজি সরবরাহ ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। একই সঙ্গে শিল্প-কারখানা, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও আবাসিকে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত সামিটের টার্মিনালটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহ এ টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে।