ঈদে নগদ টাকার চাহিদা : বেড়েছে কলমানি লেনদেন

12-8.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক-

প্রতিবছরই ঈদের আগে আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজার বা কলমানিতে টাকার চাহিদা বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে সুদহারও। কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকট এবং ঈদের চাপ একসঙ্গে উপস্থিত হওয়ায় উত্তাপ বেড়েছে কলমানি মার্কেটে। চলতি জুন মাসের ১০ দিনে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে কলমানিতে (এক দিন মেয়াদি) ৪৬ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা ধার করেছে।

এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদ গুনতে হয়েছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট বহুদিন ধরে চলছে। সম্প্রতি আরো প্রকট হয়েছে। এর মূলে রয়েছে ব্যাংকগুলোর ডলার ক্রয়ের বিপরীতে নগদ অর্থ ভল্টে চলে যাওয়া, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার বৃদ্ধি, একীভূতকরণ আতঙ্ক ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নগদ টাকা তুলে নেওয়ার চাপ, নতুন আমানত আসা কমে যাওয়া, বিতরণ করা ঋণ যথাসময়ে ফেরত না আসা ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি।

আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া সংকোচনমুখী মুদ্রানীতিতে বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কমে তারল্যসংকট আরো প্রবল হয়েছে। সংকটের সময় এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে, আবার ব্যাংক থেকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িক সময়ের জন্য টাকা ধার নেয়। সাধারণত এক দিনের জন্য এই ধার দেওয়া-নেওয়া হয়। এই কার্যক্রম যে ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয় তা আন্ত ব্যাংক কলমানি বাজার নামে পরিচিত।

এর বাইরে শর্ট নোটিশে এক দিনের বেশি সময়ের জন্যও ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে অর্থ লেনদেন করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গতকাল আন্ত ব্যাংক কলমানিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। গত বুধবার চার হাজার ১২২ কোটি টাকা। ওই দিন গড় সুদহার ওঠে ৯.৩৯ শতাংশ। এর আগের দিন মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল চার হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।

আর সুদের হার ছিল ৯.৩৫ শতাংশ। জুন মাসের শুরু থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত মোট ১০ দিন আন্ত ব্যাংক লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। এই ১০ দিনে কলমানিতে ৪৬ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা নিজেদের মধ্যে লেনদেন করেছে ব্যাংকগুলো।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ৫ জুন থেকে এই বাজারে টানা গড় সুদের হার বাড়ছে। গত ৪ জুন গড় সুদের হার ছিল ৮.৯৭ শতাংশ। এরপরের কার্যদিবসে বেড়ে হয় ৮.৯৮ শতাংশ। গত ৬ জুন তা ৯ শতাংশে ওঠে। ৭ জুন সুদ বেড়ে হয় ৯.০৯ শতাংশ। এরপর ৮ জুন ৯.২৪ শতাংশ, ১১ জুন ৯.৩৫ শতাংশ, ১২ জুন ৯.৩৯ শতাংশ এবং ১৩ জুন সুদের হার ছিল ৯.১৮ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কয়েক বছর ধরেই ঈদের আগে কলমানি সুদের হার মোটামুটি স্বাভাবিক থাকছে। এবারও সুদের হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

প্রতিবছর ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে নগদ লেনদেনের চাপ বাড়ে কয়েক গুণ। কোরবানির ঈদের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথে নগদ টাকা তুলতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে। প্রতিটি শাখায় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন গ্রাহক। নগদ টাকা উত্তোলনের চাপে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে সব সময় ভিড় হয়। মানুষজন ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে যাবে কোরবানির পশু কিনবে, তাই টাকা উঠাচ্ছেন। আবার কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন ভাতা দিতেও নগদ অর্থ তুলছেন।

স্বাভাবিক দিনের সঙ্গে তুলনা করলে লেনদেনের পরিমাণ কেমন ও নগদ টাকার সংকট আছে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির এই কর্মকর্তা বলেন, এ সপ্তাহে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। এখানে জমার চেয়ে উত্তোলনের পরিমাণই বেশি। তবে নগদ টাকার সংকট নেই; গ্রাহকের চাহিদামতো টাকা দেওয়া হচ্ছে এ ছাড়া এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্রাহক বুথ থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারবেন বলে জানান লোকাল অফিসের এই জেনারেল ম্যানেজার।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ধার করছে ব্যাংকগুলো। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪৩টি ব্যাংক ও তিনটি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৮ হাজার ২২ কোটি টাকা ধার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এর আগের দিন ৩২টি ব্যাংক ও চারটি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা ধার করে।

 

Share this post

PinIt
scroll to top