দেশের প্রায় উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর মজুদ শূন্যের কোটায়

19-4.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক –

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ ১১টি দাতা সংস্থার বিনিয়োগকৃত সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ পরিবার পরিকল্পনা সেবা কর্মসূচিতে গত ৮ মাস ধরে মজুদ সংকটে আছে। বর্তমানে দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রি কনডম, খাবার বড়ি, ইঞ্জেকশনসহ মা ও শিশু স্বাস্থ্য ওষধ সামগ্রির মজুদ শূন্যের কোটায় রয়েছে। ফলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী জরুরি এ সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে খুবই জনপ্রিয় খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম)। সারাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহীতার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ সক্ষম দম্পতি এ পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত ৮ মাস যাবত খাবার বড়িসহ জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ওষধ সামগ্রীর মজুদ শূন্যতার বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা চলছে। ওই সব ওষধ সামগ্রী যথাযথভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সরবরাহ করতে না পারায় অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে মানিকগঞ্জ জেলার এক কর্মকর্তা জানান, সেখানে গত চার মাস ধরে কর্মীদের কাছে কোনো ইনজেকশন ও কনডম নেই। এছাড়া খাবার বড়ির মজুদও প্রায় শূন্য। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণ করা না গেলে, এর প্রভাব হয়তো তাৎক্ষণিক বোঝা যায় না। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব যেমন- অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু এবং জনসংখ্যাও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।

অধিদপ্তরের সাপ্লাই চেইন এর তথ্যমতে, প্রতিমাসে খাবার বড়ির চাহিদা ৬ মিলিয়ন সাইকেলের বেশি। খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) এর বর্তমান মজুদ মাত্র ৬.৭ মিলিয়ন সাইকেল। বর্তমান যে মজুদ আছে, তা দিয়ে ১.৩ মাস চলবে। এরইমধ্যে ২৮৭টি উপজেলায় মজুদ শূন্য হয়েছে। এছাড়া ১২৭ উপজেলায় যেকোন সময় খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) মজুদ শূন্য হবে।

যেকোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মজুদ ৬ মাসের নিচে নামলেই বিক্ষিপ্তভাবে মজুদ শূন্যতা দেখা দেয়। বর্তমানে কনডম ২৩টি উপজেলা স্টোরে মজুদ শেষ, ৮৭ টি উপজেলা স্টোরে মজুদ শেষ পর্যায়ে। দেশের প্রায়ই সব পরিবার পরিকল্পনা স্টোরে (৪৯৫ উপজেলা) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইনজেকশন নেই। প্রতিমাসে প্রায় ৯ লাখ ভায়াল এর উপরে ইনজেকশনের চাহিদা রয়েছে।
মজুদ সংকটের কথা স্বীকার করে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ণ) আবদুস সালাম খান সাংবাদিকদের বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় স্টক আউট ও বেশ কিছু জায়গায় স্টক শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু পণ্য আমাদের হাতে এসেছে। সরবরাহ শুরু হলে সংকট কমতে শুরু করবে।

তিনি বলেন, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে পূণঃদরপত্র আহ্বান করা হবে। এছাড়া রেভিনিউ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সবমিলিয়ে আশাকরি দ্রুতই এ সংকটের সমাধান হবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) মতিউর রহমান বলেন, অধিদপ্তরের মজুদ সংকটের সমাধান খুব শিগগিরই সমাধান হবে। এরইমধ্যে মাঠপর্যায়ে মালামাল পৌঁছে গেছে। আশাকরি জুন মাসের মধ্যেই সংকট কেটে যাবে।

দেশব্যাপী জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংকটের বিষয়টি নজরে আনলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর সংকটের বিষয়টি আমার নজরে রয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কোথাও যাতে সংকট না হয়, সেজন্য দ্রুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে সবধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Share this post

PinIt
scroll to top