দিঘলিয়ায় এলজিইডির রাস্তা নির্মাণে নানা অনিয়ম ও নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ

448184811_3748193505416633_535050982129642999_n-1.jpg

শেখ শামীমুল ইসলাম, দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধিঃ দিঘলিয়ায় খুলনা এলজিইডির KBS প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন বারাকপুর ও দিঘলিয়া ইউনিয়ণে ৩টি পাকা রাস্তা নির্মাণে ঠিকাদারের নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের ইট ব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং এলাকাবাসী দিঘলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী ও এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলীকে বার বার জানানোর পরও ঠিকাদার ও সাব ঠিকাদার বেপরোয়া। বিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা কে এই ঠিকাদার ও সাব ঠিকাদার? তাদের খুঁটির জোর কোথায়? ঠিকাদার ও সাব ঠিকাদারের এহেন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার পরও এলজিইডি প্রকৌশলীগণ নিরবতা কি অন্য কোনো রহস্য লুকাইতো? দিঘলিয়া প্রকৌশলী দপ্তর ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এলজিইডি খুলনার KBS প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের বারাকপুর দাঁড়িরপর বটতলা মোড় থেকে সাড়ে ৬০০ মিটার রাস্তা, বারাকপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হরিপদ মাঠ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক ও দিঘলিয়া ইউপি-থানা শিশু সদন-আহকামিয়া মাদ্রাসা-গোলারঘাট-দৌলতপুর বাজার ঘাট নামক রাস্তার (১-২০০৬ মিটার) নির্মাণকাজ চলমান। উক্ত রাস্তা ৩টি নির্মাণ কার্যাদেশ পায় খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার আইচাতীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোঃ সিফাত এন্টারপ্রাইজ যার স্বত্ত্বাধিকারী আমীর হোসেন। উক্ত রাস্তা ৩টার দেখভাল করার দায়িত্বে প্রকৌশলী এনামুল হক। তবে প্রকৌশলী এনামুল হক বলেছেন ফরমাইশখানা রাস্তার এসও তিনি। বারাকপুরের দুইটি রাস্তার দায়িত্ব সার্ভেয়ার রুবেল হোসেনের। উক্ত রাস্তা ৩টার ঠিকাদারী আমীর হোসেন পেলেও উক্ত রাস্তা ৩টার কাজ করছে এলাকার সজিব নামক অপেশাদারী ব্যক্তি। খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প KBS প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন এ রাস্তা ৩টা নির্মাণে এলাকাবাসীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের ইট, খোয়া ব্যবহারের চরম অভিযোগে সোচ্চার হয়ে ওঠেছে। লাখোহাটি গ্রমের হাবিব শেখ, আলেক শেখ, আঃ সালাম,তৌহিদ শেখ, রবি শেখ, মেহেদী হাসান, মাজেদ শেখ, কওসার শেখ আঃ সাত্তার মুন্সী, মোস্তাক শেখ, আতিয়ার শেখ, জিন্নাত শেখ, রবিউল শেখ, করিম সরদার, মনিরুল ইসলাম, নূর ইসলাম শেখসহ শত শত লোক চরম ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও এলজিইডির কর্মকর্তাদের মনে এতটুটু প্রভাব পড়েনি বলে উপস্থিত লোকজন এ প্রতিবেদককে জানান। সাড়ে তিন মাস আগে বেড খুড়ে ফেলে রেখেছে রাস্তা। বাধ্য হয়ে আমরা দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ, উপজেলা প্রকৌশলী আবু তারেক সাইফুল কামাল ও বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলকে লিখিতভাবে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছি। এদিকে উক্ত সাব কন্ট্রাক্টর সজিব বারাকপুর ইউনিয়নের লাখোহাটি গ্রামের শত শত লোককে মাসের পর মাস মরণ ফাঁদে ফেলে রাখলেও ফরমাইশখানা গ্রামের ৫৬৬ মিটার রাস্তা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। নির্মাণাধীন রাস্তা ৩টার মধ্যে ফরমাইশখানা গোলারঘাট-আক্তার মেম্বরের বাড়ি পর্যন্ত ৫৬৬ মিটার (১৪৪০-২০০৬) রাস্তাটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯২ টাকা। বাকী অর্থ ব্যয় ধরা হয় বারাকপুর ইউনিয়নের লাখোহাটি গ্রামের ২টো রাস্তার। ফরমাইশখানায় নির্মাণাধীন রাস্তাটি নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের ইট ব্যবহারের ব্যপক অভিযোগ ওঠেছে এলাকাবাসীর মধ্যে। ফরমাইশখানা নিবাসী মোঃ মারুফুল ইসলাম মোল্লা বলেন, রাস্তায় খোয়া কম ব্যবহার করা হয়েছে। হেজিং তৈরতে ব্যবহৃত ইট খুবই নিম্নমানের। মাঝে কাজ বন্দ থাকলেও পুনরায় নিম্নমানের ইট এনে খোয়া ভেঙ্গে তড়িঘড়ি করে রাস্তার কাজ শেষ করার জন্য তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ল্যাব পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছেনা। যে কারণে এলাকাবাসী বলাবলি করছে নানা অনিয়মকে নিয়ম করার জন্য এভাবে কাজ করে চলেছে। রাস্তাটি নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের ইট ব্যবহারের ব্যাপারে ফরমাইশখানা নিবাসী মোল্যা মতিয়ার রহমানের পুত্র সবুজ মোল্যা এ প্রতিবেদককে জানান, রাস্তাটি নির্মাণে বালু বেশী, খোয়া কম ব্যবহার করা হয়েছে। হেজিংয়ে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও ঠিকাদারের লোকজন কারো কোনো কথা কর্ণপাত করছেনা। মাঝে কাজ বন্ধ থাকলেও সাব কন্ট্রাক্টর স্বেচ্ছাচারিভাবে কাজ চালিয়ে চলেছেন। এলজিইডির বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলীগণ মূল ঠিকাদারকে নোটিশ করলেও সাব কন্ট্রাক্টরের মাঝে কর্ণপাতের বালাই নেই। উপজেলা প্রকৌশলী আবু তারেক সাইফুল কামাল এ প্রতিবেদককে জানান, তাদেরকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। তারা বন্ধের মধ্যে হুটহাট করে নিম্নমানের ইট এনে হেজিংয়ে ব্যবহার করেছে। যা সম্পূর্ণ নিয়মের পরিপন্থী। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ দিঘলিয়া উপজেলা প্রকৌশলীকে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি উক্ত সাব কন্ট্রাক্টর ও মূল ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছেন। এদিকে রাস্তা নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অপেশাদারী ব্যক্তিদের কাজ হস্তান্তর, কাজে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের ইট ব্যবহারের ব্যাপারে এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আনিছুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, অনিয়ম করলে ছাড় দেওয়া হবেনা। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে সাব কন্ট্রাক্টরের নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ণীতির ব্যাপারে জানানো হয়েছে।

Share this post

PinIt
scroll to top