বিদ্যালয়ের আকস্মিক বেতন বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

30-2.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক পরিচালিত বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিশু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আকস্মিকভাবে দ্বিগুন বেতন ও সেশন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে নন পিডিবির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জে কোনো সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে উক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করে আসছে।

কিন্তু হঠাৎ করে গত মাসে বেতন ও সেশন ফি দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে তা জানুয়ারী থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।

এতে ননপিডিবি’র শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতনমহল চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বেতন ও সেশন ফি কমানোর জোর দাবি জানান।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ননপিডিবি’র।

এ প্রতিষ্ঠানে বিউবোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি ও বেতন ফি মাত্র ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা এবং সেশন ফি মাত্র ৩০০ টাকা।
একই বিদ্যালয়ে যে সকল ননপিডিবি’র শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছে তাদের বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নবম ও দশম শ্রেণিতে সেশন ফি ১২০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা এবং মাসিক বেতন ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণিসহ প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীদের একই হারে দ্বিগুণ বেতন ও সেশন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী অভিভাবকরা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় কোনো সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় আমরা এ বিদ্যালয়ে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করাই কিছুটা সুবিধা পাওয়ার আশায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের বেতন ও সেশন ফি দ্বিগুণ বৃদ্ধি করায় আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এ বেতন গত জানুয়ারী মাস থেকে কার্যকর করায় আমাদের উপর চাপ আরো বেড়েছে। বর্তমান বাজারের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালানোই হিমশিম খাচ্ছি। গত ছয় মাসের বেতনের টাকা ও সেশন ফি এক সাথে কিভাবে পরিশোধ করব? এ নিয়ে দুঃচিন্তায় ভূগছেন আরো অনেক অভিভাবকরা।

অভিভাবকরা জানান, স্কুল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নন পিডিবি’র নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিমাসের বেতন দ্বিগুণ বাড়িয়ে ধার্য্য করা হয়েছে ৫শ’ টাকা, যা আগে ছিল ২শ’ ৫০ টাকা। সেশন ফি ২ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ২শ’ টাকা ও মূল্যায়ণ ফি ৫শ’ টাকা, যা আগে ছিল ২৫০ টাকা।
একই শ্রেণিতে পিডিবি’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের মাসিক বেতন মাত্র ৫০ টাকা, সেশন ফি ৩শ’ টাকা ও মূল্যায়ণ ফি ৩শ’ টাকা। একইভাবে প্রতিটি শ্রেণিতে নন পিডিবি’র শিক্ষার্থীদের বেতন ও সেশন ফি দিগুণ করা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসে বেতন না নিয়ে বছরে দুইবারসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক পাওয়ানাদি আদায় করছেন। এতে গরীব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এক সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। যদি একাধিক শিক্ষার্থী হয় তবে তাদের বিপদের শেষ নেই। আকস্মিকভাবে বেতন, সেশন ফি ও পরীক্ষার ফি দিগুণ করায় ননপিডিবি’র শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল মতিন জানান, নন পিডিবির শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য গত ডিসেম্বর মাসে ম্যানেজিং কমিটি বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সিদ্বিরগঞ্জ বিউবোর প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন খলিফা জানায়, বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে আমার জানা নাই। আমি যোগদানের আগের কমিটির সিদ্ধান্ত হতে পারে। অনিয়ম হলে আমি খবর নিয়ে বিউবো এর চেয়ারম্যানকে জানাব।

নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার ইউনুস ফারুকি জানান, কোন বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার বেতন ও সেশন ফি বৃদ্ধি করতে হলে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে সবোচ্চ ত্রিশ পার্সেন্ট বৃদ্ধি করার নীতিমালা রয়েছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে ওই বিদ্যালয়ের পরিচলনা কমিটি হঠাৎ করে বেতন ও সেশন ফি বাড়ানোর বিষয়টি তদারকি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top