দেশের তথ্য ডেস্ক।।
খুলনায় পরিবেশ দিবসে ‘দূর্যোগের রক্ষাকারী সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৫ জুন) বিকালে খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরীর অডিটোরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনা এই সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী।
টিআইবি খুলনার এরিয়া কো-অর্ডিনেটর-সিই মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, রমা রহমান, রীনা পারভীন, খাদিজাতুল কুবরা প্রমুখ। সভার উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা বলেন, আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে সুন্দরবন। সিডর, আয়লাসহ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। সুন্দরবনের কারণে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত থেকে খুলনার মানুষ রক্ষা পেয়েছে। দূর্যোগ রক্ষাকারী সুন্দরবনকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবনের আয়তন বাংলাদেশ অংশে কমেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনে সুন্দরবনের আয়তন কমেছে। সুন্দরবন রক্ষায় সুন্দরবনকে নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করার দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, সুন্দরবনে ইকো-ট্যুরিজম এবং জাহাজের শব্দে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুন্দরবনে কতো ধরনের বনজ ফল আছে সেই বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন। ঔষধি গাছ-গাছড়া আছে। এগুলোও গবেষণা ও পরীক্ষা করে দেখা উচিত। সুন্দরবনকে পরিস্কারভাবে জরিপও করা হয়নি। সুন্দরবনকে রক্ষার বিষয়ে ভাবতে হবে। সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে দূষণ বন্ধ করতে হবে। বনের ভিতরে পলিথিন, পানির বোতলসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জিনিস ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় মাটির কেল্লা, মিষ্টি পানির আধার রক্ষা করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সচেতন হতে হবে। মিষ্টি পানির জন্য বড় বড় পুকুর খননের চেয়ে ছোট পুকুর করে পাড় উঁচু করতে হবে। সুন্দরবনের গাছপালা রক্ষায় কাজ করতে হবে। এসি লাগিয়ে, বারবিকিউ খেয়ে ইকো-ট্যুরিজম করলে হবে না।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমরা অনুভব পাচ্ছি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব স্বাস্থ্য শিক্ষার উপরে পড়ছে। লবন পানির কারণে কৃষি জমি ক্ষতি হচ্ছে, এই পানি মানুষ খেতে পারছে না। শ্যামল-সবুজ বাসযোগ্য একটি দেশ গঠনে জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান এই স্লোগান কি আমরা মানছি? পরিবেশ বাঁচাতে হলে গাছ লাগাতে হবে। গাছ লাগিয়ে দেশকে সবুজ শ্যামলে পরিণত করতে হবে।
সভায় পরিবেশ দিবসে টিআইবির ধারণাপত্রে ১৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিসমূহ হলো-
১. তাপমাত্রা হ্রাস এবং খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধে সরকার প্রদত্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারসমূহের সময়াবদ্ধ ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২. পরিবেশ সুরক্ষায় এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৫ অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে। সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিতে অন্তর্ভুক্ত এবং তা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
৩. “ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন ২০২৪”-এর প্রেক্ষাপট অংশে পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য উৎপাদনে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার শব্দগুলোর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা” উল্লেখ করতে হবে।
8. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ভূমি পুনরুদ্ধার, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ খরা মোকাবেলায় কৃষি ব্যবস্থাপনার জন্য টেকসই ভূমি ব্যবহার কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, জলাশয়, বনাঞ্চল, পাহাড় ও পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা সঠিকভাবে
চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৬. অবৈধভাবে দখলকৃত বনভূমি ও নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. ২০৩০ সালের মধ্যে ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন নিউট্রালিটি বা ভূমির অবক্ষয় শূন্যে নামিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে পরিবেশ ও জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. বনভূমি, জলাভূমি ও কৃষি জমির অবক্ষয় রোধে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শিল্প কারখানা স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
১০. পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সেই সম্পদে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. জলবায়ু তহবিলের কার্যক্রমে খরা মোকাবেলা ও পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
১২. বন, নদী ও জলাভূমির দখল এবং এর শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে; ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন রোধে পরিবেশ আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন বন্ধ করতে হবে; ভূমি ও পানি দূষণ রোধে কৃষি ও মৎস্যচাষে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১৪. পলিথিনসহ শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. প্রয়োজনীয় জলবায়ু তহবিল প্রদানে উন্নত দেশগুলোকে বাধ্য করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে অধিপরামর্শ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
১৬. তাপমাত্রা হ্রাস, খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধে সরকারকে জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
১৭. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আদিবাসী, উপকূলীয় এবং খরা উপদ্রুত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলকে একত্ব প্রদান করে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
১৮. বাস্তুতন্ত্র, ভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে উৎসাহিত করে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৯. পরিবেশ সংরক্ষণ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিতসহ স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।