দেশের তথ্য ডেস্ক।।
ব্রিকসে যোগদানের জন্য বাংলাদেশকে সক্রিয় সমর্থন দেবে চীন। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সভায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। গতকাল সোমবার (৩ জুন) বেইজিংয়ে আয়োজিত সভায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। চীনের পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জসিম উদ্দিন, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছিলেন। অপরদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুসংহতকরণ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচার এবং বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফরমে সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।
সূচনা বক্তব্যে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ককে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেয়।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে চীন সফরের কথা স্মরণ করেন। আসন্ন ভিভিআইপি সফরের আগে চীনা ভাষায় ‘নতুন চীনকে আমি যেমন দেখেছি’ বইটি প্রকাশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরেন, যা ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্ব’-এর সম্পর্ককে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান।
যার মধ্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ব্যাখ্যা করেন এবং চীনে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত (ডিএফকিউএফ) সুবিধার বিদ্যমান কাঠামো সহজতর করতে চীনের সহায়তা কামনা করেন।
পররাষ্ট্রসচিব মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে চীনের অব্যাহত সমর্থনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান এবং সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার জন্য গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
তিনি ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। তার যোগ্য নেতৃত্বে বাঙালি জাতি সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর এবং গত বছরের ব্রিকস সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আলোচনার কথা স্মরণ করেন।
ওয়েইডং উল্লেখ করেন, ঢাকা ও বেইজিং দুদেশের দূতাবাস দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তিনি ব্রিকসে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের আগ্রহের প্রশংসা করেন এবং তিনি চীনের সক্রিয় সমর্থনের আশ্বাস দেন। চীনের ভাইস মিনিস্টার মন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে আম ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানিতে এবং তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করতে চীনের একযোগে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান। চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর এবং আগামী বছর ঢাকায় দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পরবর্তী দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠানের জন্য উভয় পক্ষ যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।