দেশের তথ্য ডেস্ক।।
নরেন্দ্র মোদির হ্যাটট্রিক নাকি অন্য কেউ– ভারতের ক্ষমতার মসনদে কে বসছেন, জানা যাবে আজ মঙ্গলবার। শেষ দফা ভোটের পর বুথফেরত জরিপে একচেটিয়াভাবে এগিয়ে রাখা হয় ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটকে। আভাস দেওয়া হয়– বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পাবে সাড়ে তিনশর বেশি আসন। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের দাবি, তারা ২৯৫ আসন পেয়ে জয়ী হতে যাচ্ছে। আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বুথফেরত জরিপকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এগুলো মোদি সমর্থিত গণমাধ্যমের জরিপ।
তীব্র তাপদাহের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল সাত দফার ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় ১ জুন। ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৪২টি লোকসভা আসনের ভোট গণনা শুরু হবে আজ সকাল ৮টায়। সবার চোখ থাকবে ভোটের ফলাফলের দিকে। ৬০০-এর বেশি কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় হবে ভোট গণনা। সকাল ৯টার পর গণনার অংশিক তথ্য প্রকাশ শুরু হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ধ্যার মধ্যে জানা যাবে নতুন সরকারের দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন।
ভোটে পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটেনি। তাপদাহের কারণে হিট স্ট্রোকে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ধর্মীয় মেরূকরণ জোরদার করতে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা তুমুল সমালোচনার জন্ম দেয়। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মনমোহন সিংসহ অনেক বিরোধী নেতা মোদির বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদের মর্যাদা খাটো করার অভিযোগ এনেছেন।
এবার যেসব রাজ্যে মোদির এনডিএ জোট শক্ত প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে, তার মধ্যে বিহার অন্যতম। সেখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে তাঁর সভায় মানুষের ঢল দেখা যায়। তবে রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার নির্বাচনের আগে আকস্মিক এনডিএ জোটে ফেরায় কিছুটা শক্তি ফিরে পায় বিজেপি।
নির্বাচনজুড়ে মোদি ও এনডিএ জোট সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি প্রচার চালাতে থাকেন, মোদি ৪০০ আসনের বেশি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছেন দেশের সংবিধানকে বদলানোর জন্য । ‘কোটিপতিদের সরকার’ দেশ চালাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রাহুল অভিযোগ করেন, মোদি তাঁর ঘনিষ্ঠজন শিল্পপতি গৌতম আদানি ও ধীরুভাই আম্বানিকে সুবিধা দিচ্ছেন; তাদের ঋণ মওকুফ করছেন, কিন্তু কৃষকের ঋণ মওকুফ করছেন না।
এবার নির্বাচনে রাহুল গান্ধীর জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় বেড়েছে বলেই মনে করা হয়। উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন সভায় বিপুলসংখ্যক জনতার উপস্থিতি দেখা গেছে। এ ছাড়া ভারতের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলায় তাদের মধ্যেও তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়েছে।
বুথফেরত জরিপগুলোতে এনডিএ জোটের বড় জয়ের আভাস দেওয়া হয়েছে। এমনটা হলে মোদি আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। কিন্তু ফল ভিন্নরকম হলে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন– তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। বিরোধী জোটের নেতাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। রাহুল গান্ধীকেও চান তাঁর অনেক ভক্ত। এ ধরনের কোনো চমক থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রীও অনুঘটক হয়ে উঠতে পারেন।
গণনার আগে গতকাল সোমবার জরুরি বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। গণনার প্রস্তুতি, নিরাপত্তাসহ একাধিক বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দিল্লি থেকে পুরো গণনা প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখবেন দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ও বাকি দুই নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ও সুখবীর সিং সান্ধু। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন রাজীব কুমার। তিনি বলেন, ভোট গণনায় কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। কোনো ভুল হতেই পারে না। সিসি ক্যামেরা থাকবে। গণনা কেন্দ্রগুলোতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশি নজরদারির পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
লোকসভার নির্বাচনের ভোট গণনার পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যার বিধানসভা নির্বাচনেরও ফল ঘোষণা হবে আজ। সেই সঙ্গে ভারতের একাধিক রাজ্যের বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফলও ঘোষণা হবে। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে ভোট গণনার জন্য ৫৫টি কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। কাউন্টিং হলের সংখ্যা ৪১৮। কমিশন সূত্র জানায়, গণনা কেন্দ্রের বাইরে ২০০ মিটার পর্যন্ত জারি থাকছে ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।
জয়ী হলে ৭৩ বছর বয়সী মোদি হবেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর তিনবার পরপর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। বুথফেরত জরিপে দক্ষিণ ভারতেও এনডিএ ভালো ফল করতে পারে বলে আভাস দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে তারা হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে বড় দল।
তবে জরিপের আভাস সব সময় সত্য না হওয়ার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো এ জরিপ আমলে নিচ্ছে না। আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল এটিকে ‘ভুয়া’ বলে বর্ণনা করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসপ্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি এ বুথফেরত জরিপে বিশ্বাস করেন না। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, এটি পুরোপুরি মিথ্যা। কংগ্রেস পাবে ২৯৫ আসন। আর কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী বলছেন, বুথফেরত জরিপে যা দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে তার উল্টোটা হবে। পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আসল ফলাফলের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দেখতে থাকুন কী হয়।’